বাজেট কি?
প্রতি অর্থবছরের শুরুতে রাষ্ট্র একটি আয় ব্যয়ের হিসাব করে এটাকেই আমরা সোজা বাংলায় বাজেট বলে থাকি। একটু গুছিয়ে বললে, একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোন খাতে কত ব্যয় হবে সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট।কথায় আছে আয় বুঝে ব্যয় কর। ব্যাক্তি পর্যায়ে এটি যথার্থ হলেও রাষ্ট্রের হিসাব এর ঠিক উল্টা। রাষ্ট্র আয় বুঝে ব্যয় নয় বরং ব্যয় বুঝে আয় করে।
![]() |
বাজেট কি? কত প্রকার এবং গুরুত্ব |
সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন তাদের বেতন দিতে হয়, প্রসাশন ও শিক্ষা খাতেও ব্যয় করতে হয় প্রচুর। একচুয়ালি বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয় ব্যয়ের হিসাব।
ভারতের প্রেক্ষাপটে প্রতি বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে তার পরের বছর ৩১ সে মার্চ পর্যন্ত একটি অর্থবছর হিসাব করা হয়।
বাজেট কেন দরকার, এর গুরুত্ব এবং বাজেট সম্পর্কে আরও খুটিনাটি তথ্য জানার চেষ্টা করব আগামী কয়েক মিনিটে।
বাজেট কত প্রকার:
আয় ও ব্যয়ের দিক থেকে বাজেট দুই প্রকার। প্রথমটি হচ্ছে সুষম বাজেট এবং অপরটি হচ্ছে অসম বাজেট।সুষম বাজেট কাকে বলে?
যে বাজেটে সরকারের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান থাকে তাকে সুষম বাজেট বলে।
অসম বাজেট কাকে বলে?
আর সরকারের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান না হলে তাকে বলা হয় অসম বাজেট। অসম বাজেট আবার দুই প্রকার, উদ্বৃত্ত বাজেট এবং ঘাটতি বাজেট।
- উদ্বৃত্ত বাজেট:
- ব্যয়ের তুলনায় আয় বেশি হলে সেটাকে বলা হয় উদ্বৃত্ত বাজেট,
- ঘাটতি বাজেট:
- এবং ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হলে সেটিকে বলা হয় ঘাটতি বাজেট।
আয় ও ব্যয়ের ধরনের ভিত্তিতেও বাজেটকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন: রাজস্ব বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেট।
রাজস্ব বাজেট কাকে বলে?
রাজস্ব বাজেট হচ্ছে সরকার পরিচালনার খরচ। রাজস্ব বা অনুন্নয়ন বাজেট কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হল : দেশরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রসাশন চালানোর খরচ।
এরমধ্যে সুদ পরিশোধ এবং বেতন - ভাতা ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত। যা প্রতিবছরই বিপজ্জনক হারে বাড়ছে।
উন্নয়ন বাজেট কাকে বলে?
দেশ পরিচালনায় যত ধরনের ব্যয় আছে তা পূরণ করার পর আয়ের বাকি অংশ দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়ন করে।
রাস্তা নির্মাণ, সেতু নির্মান থেকে শুরু করে গ্রামীন উন্নয়ন, বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী, স্কুল - কলেজ ও হাসপাতাল তৈরী থেকে শুরু করে আরও যা কিছু করে থাকে এসব উন্নয়ন বাজেটের অন্তর্ভূক্ত।
রাজস্ব উদ্বৃত্ত এবং দেশের অভ্যন্তরীন ও বাইরে থেকে নেওয়া ঋণের সমন্বয়ে উন্নয়ন বাজেট করা হয়ে থাকে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি নামে একটি প্রকল্প খাত রয়েছে।
এ খাতেই সাধারণত উন্নয়ন বাজেটের খরচ দেখানো হয়।
রাষ্ট্রের আয়ের উৎস:
রাষ্ট্রের আয়ের উৎস তিনটি। প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর, ও কর বহির্ভূত আয়। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে রয়েছে ; আয়কর, কর্পোরেট কর, উত্তরাধিকার কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি।আর পরোক্ষ কর হচ্ছে ; আমদানি কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি। কর ছাড়াও সরকারের আয়ের আরও উৎস আছে।
যেমন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভ, সুদ, সাধারন প্রসাশন থেকে আয়, পরিবহন আয়, জরিমানা, দন্ড থেকে আয়, ভাড়া, ইজারা, ও টোল থেকে আয় ইত্যাদি।
বাজেট সম্পর্কে বিস্তারিত:
আমরা নিজেরাও ব্যাক্তিগত জীবনের হিসাব মিলানোর জন্য বাজেট নির্ধারণ করে থাকি। তবে আমরা আয় করার পর ঠিক করি আমরা ঠিক কতটুকু অর্থ ব্যয় করব।কিন্তু রাষ্ট্র ঠিক তার বিপরীতে আগে ঠিক করে দেশের জন্য আগামী বছরে মোট কত টাকা খরচ হবে তখন সেই খরচ অনুযায়ী কোন কোন খাত থেকে কত টাকা আয় করতে হবে তা ঠিক করা হয়।
সাধারণত উন্নত দেশগুলো বাণিজ্য চক্র মেনে সুষম বাজেট করে থাকে। একটা সময় ছিল যখন ঘাটতি বাজেটকে ক্ষতিকর এবং সরকারের দুর্বলতা ভাবা হতো।
এখন বরং অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র রাষ্ট্রের কিছুটা ঘাটতি থাকা ভালো। এতে ঘাটতি পূরণের চাপ থাকে যার ফলে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
ঘাটতি বাজেটে সাধারনত মোট দেশীয় উৎপাদন বা দেশের মোট জিডিপির সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতিকে মেনে নেওয়া হয়।
বাজেটের ঘাটতি দুই ভাবে পূরণ করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে - বৈদেশিক ঋণ এবং অপরটি অভ্যন্তরীণ উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎস ও আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।
যেমন : ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত ব্যবস্থা। ব্যাংক বহির্ভূত ব্যবস্থা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার।
উপসংহারঃ
আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা শেষে আমরা চেষ্টা করি যে, ব্যাক্তি পর্যায়ে নিজেদের দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি বিচার করতে। বাজেটের ঘাটতি মিঠাতে সরকার যে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে থাকে সেটা যদি আয়ত্তের বাইরে চলে য়ায় তাহলেই বাড়বে বিপদ। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত শ্রীলঙ্কা।অতিরিক্ত বাজেটের টাকা যোগান দিতে সমস্যায় পড়তে হয় দেশের সাধারণ জনগনকে। অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করতে সরকার কর, ভ্যাট ইত্যাদি বাড়ানো শুরু করে যার ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়।
অথবা সরকার অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপিয়ে ঘাটতি পোষানোর চেষ্টা করে যার কারনে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। ঘুরেফিরে প্রভাবটা সাধারণ মানুষের কাধেই পড়ে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাক্তিগত মতামত নিচে জানাতে পারেন।
No comments:
Post a Comment
Thanks for comment us.