একটা ব্যাপার হয়ত খেয়াল করে থাকবেন, বেশিরভাগ ব্যাংকের ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের উপর ভিসা বা মাস্টারকার্ডের লোগো থাকে। কিছু কিছু কার্ড আছে যেগুলোর উপর আমেরিকান এক্সপ্রেসের লোগো বসানো থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কি এই ভিসা এবং মাস্টারকার্ড। ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি। কিভাবে কাজ করে এসব কোম্পানি।
প্লাস্টিক কার্ডের উপর ভিসা, মাস্টারকার্ড কিংবা আমেরিকান এক্সপ্রেসের লোগো থাকার অর্থ হচ্ছে কার্ডটি সেই কোম্পানি দ্বারা ইস্যু করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কি এই ভিসা এবং মাস্টারকার্ড। ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি। কিভাবে কাজ করে এসব কোম্পানি।
![]() |
diffrent between visa and master card |
এই সব প্রশ্নের উত্তর জানর চেষ্টা করব আগামী কয়েক মিনিটে।
ভিসা এবং মাস্টারকার্ড কি:
ভিসা এবং মাস্টারকার্ড উভয়ই হচ্ছে আমেরিকান পেমেন্ট সিস্টেম নেটওয়ার্ক। যদিও ভিসা এবং মাস্টারকার্ড ছাড়াও আরও কিছু পেমেন্ট সিস্টেম নেটওয়ার্ক আছে যেমন আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং ভারতের রুপেই (Rupay)।তবে আমরা আজ আলোচনা করব সবচেয়ে জনপ্রিয় ২টি কোম্পানি ভিসা এবং মাস্টারকার্ড নিয়ে। সাধারনত ভিসা মাস্টারকার্ডের মত কোম্পানি ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকে।
ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের ইতিহাস:
প্রশ্ন হচ্ছে এই এটিএম কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ডের জন্মই বা হল কেন। তাহলে গল্পটা একটু পিছন থেকেই শুরু করা যাক।এটিএম কার্ড আবিষ্কার হওয়ার আগে সিস্টেম ছিল টাকা ব্যাংকে জমা করবেন এবং প্রয়োজন হলে ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলন করে আনবেন। ভালই চলছিল এই সিস্টেম।
কিন্তু ব্যাংকে গ্রাহক বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে লাগল সমস্যাও। নিজের জমাকৃত টাকা পাওয়ার জন্যও মানুষকে ব্যাংকে লম্বা লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
এবং আরেকটা সমস্যা ছিল ব্যাংক যেহেতু ২৪/৭ খোলা থাকে না, তাই কোন ব্যাক্তির যদি এমন সময় জরুরী টাকার প্রয়োজন হয় যে সময় ব্যাংক বন্ধ তবে নিজের টাকা হওয়া সত্ত্বেও টাকা উত্তোলন করতে পারে না গ্রাহক।
এই সমস্যা সমাধানের লক্ষে আবিষ্কৃত হল এটিএম কার্ড। অর্থাৎ আপনি আপনার টাকা ব্যাংকে জমা করবেন এবং আপনার আপনার একাউন্টের বিপরীতে ব্যাংক আপনাকে একটি প্লাস্টিক কার্ড প্রদান করবে, যেটা ব্যাবহার করে আপনি এটিএম বুথ থেকে যখন ইচ্ছা তখন আপনার একাউন্টে থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
এই ব্যবস্থা কিছুদিন ভালোভাবে চললেও সৃষ্টি হয় নতুন সমস্যার। সমস্যা হল মনে করুন আমি যদি শপিং করতে যায় তাহলে প্রথমে আমাকে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে আনতে হবে, শপিং করার পর দোকানদারকে সেই টাকা দিব এবং দোকানদার সেই একই টাকা আবার তার ব্যাংক একাউন্টে জমা করবে।
এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াটা আরও সহজ করার উদ্দেশ্যে জন্ম হয় ডেবিট কার্ডের। ডেবিট কার্ডের একটা সমস্যা ছিল সেটা হচ্ছে, মনে করুন আমার একাউন্ট হল ইউসিবি ব্যাংকে তাহলে আমি যাকে পেমেন্ট করব তারও একাউন্ট থাকতে হতো ইউসিবি ব্যাংকে।
তবেই কেবল আমার কার্ড থেকে তার কার্ডে পেমেন্ট করা যেত। অর্থাৎ একই ব্যাংক না হলে এক কার্ড থেকে আরেক কার্ডে টাকা পাঠানো যেত না। এটাতো শুধু বাংলাদেশের চিত্র।
আপনি যদি দেশের বাইরে যান তাহলে আরও কত ধরনের ব্যাংক আছে, সবাই আলাদা আলাদা ডেবিট কার্ড ইস্যু করছে।
এই সমস্যা নিরসনে প্রথম কাজ শুরু ভিসা কোম্পানি এবং এরপর প্রতিযোগীতায় আসে মাস্টারকার্ড।
ভিসা এবং মাস্টারকার্ড কিভাবে কাজ করে:
ডেবিট কার্ড ব্যাবহার করে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে এতদিন সমস্যা ছিল যেহেতু আলাদা আলাদা ব্যাংকের আলাদা আলাদা ডেবিট কার্ড, তাই একজনের মানুষের বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক কার্ড প্রয়োজন হতো।এখানে ভিসা এবং মাস্টারকার্ড পেমেন্ট নেটওয়ার্ক হিসাবে কাজ করা শুরু করল। এই দুই কোম্পানি বিশ্বের সব ব্যাংকের সাথে মিলে একটি জোট গঠন করল।
যার মাধ্যমে তারা ব্যাংকগুলোর সার্ভারের এক্সেস নিয়ে নিজেদের একটি ডাটাবেজ গড়ে তোলে। এরপর এরা বলল আমরা প্রত্যেক একাউন্টের জন্য ডেবিট কার্ড ইস্যু করব এতে সুবিধা হবে সব কার্ডের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরী হবে এবং সব একাউন্টের তথ্য এক জায়গায় স্টোর থাকবে।
যার কারনে এক ব্যাংকের কার্ড থেকে অন্য ব্যাংকের কার্ডে টাকা লেনদেন করতে আর কোন সমস্যা হবে না। মনেকরুন আমার একাউন্ট ইউসিবি ব্যাংকে এবং আপনার একাউন্ট ইসলামি ব্যাংকে এবং দুই জনের কার্ডই ভিসা কার্ড।
তবে কি ঘটবে? যেহেতু আমাদের দুই জনের কার্ডই ভিসা নেটওয়ার্ক সাপোর্টে করে তাই আমাদের দুই জনের ব্যাংকের তথ্যই আছে ভিসা কোম্পানির ডাটাবেজে। আমি আপনাকে কোন পেমেন্ট করলে সেটা ভেরিফাই করবে ভিসা কোম্পানি।
এখানে ভিসা বা মাস্টারকার্ডের মত কোম্পানি তৃতীয় পক্ষ হিসাবে কাজ করে। মনেকরুন আমার কাছে একটি ডেবিট কার্ড আছে যেটা মাস্টারকার্ড কোম্পানির।
এখন মাস্টারকার্ড সাপোর্টেট এমন যে কোন জায়গায় আমি যদি আমার কার্ডটি সোয়াইপ করি তাহলে মাস্টারকার্ড কোম্পানির কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি রিকুয়েস্ট পৌছে যাবে।
এখন যেহেতু তারা প্রত্যেক ব্যাংকের সার্ভারের এক্সেস নিয়ে রেখেছে তাই তারা দেখতে পারে আমার একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা আছে কিনা।
যদি থাকে তবে তারা আমার ব্যাংক একাউন্ট থেকে সেই টাকা কেটে নিবে এবং যাকে আমি টাকা পাঠাচ্ছি তার একাউন্ট পর্যন্ত পৌছে দিবে মাস্টারকার্ড কোম্পানি।
অর্থাৎ ভিসা বা মাস্টারকার্ডের মত কোম্পানি গুলো মাঝখানে তৃতীয়পক্ষ হিসাবে কাজ করে। এবং মধ্যস্থতাকরী হিসাবে ভূমিকা পালনের বিনিময়ে ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মত কোম্পানি ট্রানজেকশন ফি চার্জ করে থাকে।
সুবিধা অসুবিধা :
যদি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক গুলোর সুবিধা অসুবিধার কথা বলতে যায় তবে ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মধ্যে তেমন বড় কোন পার্থক্য নেই।তবে যদি আমেরিকান এক্সপ্রেসের কথা চিন্তা করি তবে আমেরিকান এক্সপ্রেস ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের চেয়ে বেশ অনেকটাই পিছিয়ে থাকবে। সেটা হোক সুযোগ সুবিধা অথবা মার্কেট শেয়ার।
আমেরিকান এক্সপ্রেসের তুলনায় ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেশি, যেটা ভিসা এবং মাস্টারকার্ডকে অন্যদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রাখে।
রুপেই কার্ডের ও একই অবস্থা ভারতের অভ্যন্তরে মোটামোটি ব্যাবহার করা গেলেও দেশের বাইরে সম্পূর্ন অচল রুপেই কার্ড।
তবে গ্রহনযোগ্যতার দিক থেকে ভিসা এবং মাস্টারকার্ড এগিয়ে থাকলেও রিওয়ার্ড অথবা ক্যাশব্যাকের ক্ষেত্রে আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং রুপেই কার্ড তুলনামূলকভাবে সামান্য এগিয়ে থাকবে।
No comments:
Post a Comment
Thanks for comment us.