রেমিটেন্স কাকে বলে?
রেমিটেন্স (Remittance) শব্দের অর্থ প্রেরণ করা। বিদেশে কর্মরত ব্যাক্তিরা নিজদেশে পরিবার বা আত্মীয় স্বজনের কাছে যে অর্থ প্রেরণ করে তাকে রেমিটেন্স বলে।আধিক বেতন, উন্নত কর্ম পরিবেশ ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায়।
এসব প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স একটা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। রেমিটেন্স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপি বৃদ্ধি পায়।
![]() |
রেমিটেন্স কাকে বলে |
ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে আসা সব টাকায় রেমিটেন্স নয়। অনেক বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং এবং দেশে বসে বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।
কিন্তু এগুলো রেমিটেন্সের অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব উপার্যন রপ্তানি আয়ের অন্তর্ভুক্ত। ফ্রিল্যান্সিং এবং দেশে বসে বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করা সেবা রপ্তানি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
অর্থাৎ কোন বৈদেশিক মুদ্রা রেমিটেন্স হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল বিদেশে অবস্থান করে দেশে টাকা পাঠানো।
বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স আদান প্রদান:
সকল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রতিবছর রেমিট্যান্সের প্রবাহ নির্ণয় করে বিশ্বব্যাংক।Statista এর একটি তথ্যসূত্রে ২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ ছিল ভারত। ২০২০ সালে ভারত রেমিটেন্স হিসাবে অর্জন করেছে প্রায় ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০০৮ সাল থেকে ভারত রেমিট্যান্স অর্জনে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। শীর্ষ রেমিটেন্স অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স অর্জনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের পরেই রেমিটেন্সের অবদান সবচেয়ে বেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে তা দেশের মোট রপ্তানি আয় এর প্রায় অর্ধেক। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের অবদান মোট জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ সরকার বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছিল। চলতি বছরে এই হার ২% থেকে বাড়িয়ে ২.৫০% করা হয়েছে।
অর্থাৎ বিদেশে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তি যদি রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশ 100 টাকা প্রেরণ করে তবে ১০০ টাকার সাথে ২.৫০% প্রণোদনা যোগ হয়ে মোট ১০২ টাকা ৫০ পয়সা পাবে তার স্বজনরা।
বাংলাদেশ কতৃক গৃহিত রেমিটেন্স :
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।২০২১ সালে রেমিটেন্স পাঠায় প্রায় ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার রেমিটেন্স হিসাবে অর্জন করে বাংলাদেশ।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ২৩ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রণোদনা বাড়ায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিটেন্স আসে প্রায় ১৭০ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
রেমিটেন্সের গুরুত্ব :
রেমিটেন্স হলো একটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। রেমিটেন্স শুধুমাত্র একটি পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট মিঠায় ব্যাপারটা শুধু এতটুকুর মাঝেই সীমাবদ্ধ না।একজন প্রবাসী রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে তার পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রেমিটেন্সের বহুমুখী সুবিধা রয়েছে। রেমিটেন্স একদিকে যেমন প্রত্যক্ষভাবে একটি দেশে ফরেন কারেন্সি রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে।
তেমনি পরোক্ষভাবে একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। উদাহরণ হিসেবে একটা পুকুরের কথাই ধরা যাক। মনেকরুন একটি পুকুর, পুকুরটি হল একটি দেশ এবং পুকুরের পানি হচ্ছে সেই দেশের অর্থনীতি।
এখন মনে করুন আপনি একজন সরকারী চাকরিজীবী। আপনি যে টাকা বেতন পান মাস শেষে সেই টাকা আপনি দেশের মধ্যেই খরচ করেন।
পরবর্তী মাসে আবার সেই টাকা আপনার হাতে বেতন হিসেবে দেওয়া হয় আবার আপনি সেটা খরচ করেন।
এই পদ্ধতিতে আপনি আমি টাকা আয় করলেও সামগ্রিকভাবে দেশে কিন্তু টাকার পরিমান বাড়ছে না। অর্থাৎ দেশের টাকা দেশের মধ্যেই হাতবদল হচ্ছে শুধুমাত্র।
আমরা যখন দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্য করি তখন সেটি পুকুরের পানি দিয়ে পুকুরে গোসল করার মত অবস্থা, যাতে করে পুকুরের পানির পরিমান বাড়ছে না।
আমরা যখন দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্য করি তখন সেটি পুকুরের পানি দিয়ে পুকুরে গোসল করার মত অবস্থা, যাতে করে পুকুরের পানির পরিমান বাড়ছে না।
অর্থাৎ দেশের অর্থনীতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। আর রেমিটেন্স হলো আপনি বাইরে থেকে কয়েক বালতি পানি এনে পুকুরের ঘাটে গোসল করলেন।
এতে করে আপনার প্রয়োজনও মিঠে গেল এবং পুকুরেও কিছুটা অতিরিক্ত পানি যোগ হল। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হল। এবং একটি দেশের অর্থনীতি যত সমৃদ্ধ সেই দেশ উন্নত।
যেটা বর্তমানে আমরা আমেরিকার দিকে তাকালেই দেখতে পাই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফাইনান্সিয়াল মার্কেট আমেরিকার দখলে।
আমরা অনুমান করতে পারি যে একটি দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে রেমিটেন্সের ভুমিকা কতটুকু। আর যারা রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য দেশের মায়া ত্যাগ করে পড়ে আছেন ভিনদেশের দেশের কোন এক কোনায় তাদের বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা।
Conclusion:
অতএব,,আমরা অনুমান করতে পারি যে একটি দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে রেমিটেন্সের ভুমিকা কতটুকু। আর যারা রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য দেশের মায়া ত্যাগ করে পড়ে আছেন ভিনদেশের দেশের কোন এক কোনায় তাদের বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা।
No comments:
Post a Comment
Thanks for comment us.