Class 11 Bengali Suggestion 2023 | Class xi Bengali Question 2023 | ক্লাস 11 বাংলা প্রশ্ন উত্তর 2023 | একাদশ শ্রেণির বাংলা সিলেবাস 2023 | একাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন 2023 pdf download | একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন 2023 | একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন উত্তর
![]() |
Class 11 Bengali Suggestion 2023 |
একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন (Class 11 Bangla Suggestion 2023)। কিন্তু এই প্রশ্ন গুলি ছাড়াও কিন্তু তোমরা একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা গল্প গুলি অবশ্যই ভালোভাবে পড়বে।
Class 11 Bangla All Chapter:
Class 11 Bangla Question Pattern:
Class 11 Bengali Suggestion 2023 (একাদশ শ্রেণির বাংলা)
Class 11 Bangla - B (Question & Answer)
কর্তার ভূত:
১. “ভবিষ্যতকে মানলেই তার জন্য যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোন ভাবনা নেই” – কোন প্রসঙ্গে এই কথাটি বলা হয়েছে?ভূতকে মানলে ভাবনা নেই কেন? উদ্ধৃতিটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ - 1
⇛ বুড়ো কর্তার মৃত্যু আসন্ন জেনে দেশবাসী অস্থির হয়ে পড়ে। বিচলিত দেশবাসীর অসহায়তা ও মনোকষ্ট দেখে কর্তাও দুঃখিত হন। কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য। এমন অবস্থায় 'দেবতা দয়াপরবশত হয়ে কর্তাকে ভূত হয়ে মানুষের ঘাড়ে চেপে থাকার পরামর্শ দেন। এই প্রসঙ্গেই প্রন্মের এই উত্তিটি করা হয়েছে। ভূতকে মানলে নিজস্ব চিন্তাভাবনা কিংবা ভবিষ্যতের কথা সব জলাঞ্জলি দিয়ে সমস্ত ভাবনাই ভূতের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া যায়। আর ভূতের যেহেতু মাথা নেই, তাই তার কারও জন্য মাথাব্যথাও নেই।
⇛ কর্তার ভূত" বলতে রবীন্দ্রনাথ অতীতের ধর্মীয় কুসংস্কার, মৃত প্রথার প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং যুস্তিহীন রক্ষণশীলতাকে বুঝিয়েছেন। মামুলি ভূতের গল্পের আদলে তিনি আসলে দেশের সত্যিকারের রূপটিকে তুলে ধরেছেন। তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গের সঙ্গে তার সুনিপুণ সামাজিক পর্যবেক্ষণের সংমিশ্রণে ধরা পড়েছে ভারতের প্রকৃত দুর্দশা।
⇛ আধুনিকতার প্রাথমিক শর্তই হল যুক্তি, বুদ্ধি এবং বিশ্লেষণ । কিন্ত এদেশের মানুষ এর বিপরীত পথে হেঁটে সব ভাগ্য বা অদৃষ্টের হাতে সমর্পণ করে বসে আছে। দেশের কর্ণধারেরাও সবসময় নিজেদের অস্তিত্বের বিপন্নতার ভয়ে আতঙ্কিত। কারণ তারা জানে ৷ আধুনিকতার আতশকাচের নীচে তাদের সীমাবদ্ধতার গণ্ডি প্রকাশ্যে এসে যাবে। তাই ভবিষ্যতের পথে না-হেঁটে তারা ভূত তথা অতীতকে আঁকড়ে ধরেই প্রাণে বাচতে চায়।
উত্তরঃ - 2
⇛ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'কর্তার ভৃত' গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। বুড়ো কর্তা যখন মরণাপন্ন হলো তখন দেশের সবাই বলে উঠোছিল 'তুমি গেলে আমাদের কি দশা হবে? কর্তাও মনে মনে ভেবেছিলো যে তার মৃত্যুর পর দেশবাসীর অভিভাবক কে হবে। শেষ পর্যন্ত দেবতার দয়ায় একটা উপায় হয়েছিল। বুড়ো কর্তা যাতে মারা যাওয়ার পরও ভূত হয়ে দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকে সেই ব্যবস্থা করা হল। দেশবাসীও নিশ্চিন্ত হল। এই প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে।
⇛ বুড়ো কর্তা মারা গেলে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটাই দেশের লোকের প্রধান চিন্তা হয়ে ওঠে। আসলে এই দেশবাসী ভীতু, রক্ষণশীল এবং আত্মমর্যাদাহীন। নতুন কিছুকে গ্রহন করার সাহস এবং ক্ষমতা তাদের নেই। লেখক বলেছেন- 'ভবিষ্যতকে মানলেই তার জন্য যত ভাবনা, ভুতকে মানলে কোন ভাবনাই নেই'। কারণ, ভুতকে মানলে স্বাভাবিকভাবেই সব ভাবনা ভুতের মাথায় চাপে। কিন্তু, ভুতের মাধা নেই তাই কারো জন্য তার মাধাব্যথাও নেই।
⇛ আসলে ভুত হল অজ্ঞতা, ভবিষ্যৎ হল জ্ঞান। ভবিষ্যৎকে মানতে হলে অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞতা ও রক্ষণশীলতাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন করে সবকিছু ভাবতে হবে। কিন্তু দেশবাসী এই পরিবর্তন চায় না। তাই লেখক এই কথাগুলি বলেছেন।
====================
২. “ওরে অবোধ, আমার ধরারও নেই, ছাড়ারও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া” – কে কাদের অবোধ বলেছেন?উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ - 1
⇛রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কর্তার ভূত' গল্পে বুড়ো কর্তা 'ভূতগ্রস্ত' দেশবাসীকে 'অবোধ' বলে সম্বোধন করেছেন। গল্পের শেষ অংশে কর্তার এই কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
⇛গল্পের শেষ অংশে কর্তার এই কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কর্তা মারা যাওয়ার পর দেশবাসী মনে করল যে কর্তা ভূত হয়ে তাদের ধরে রেখেছে। কর্তার অভিভাবকত্বে অনেকে শান্তি অনুভব করলেও দেশের নবীন প্রজন্ম বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এরকম অবস্থায় দেশের দু- একজন মানুষ যারা দিনের বেলায় ভুতুড়ে নায়েবের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না, গভীর রাতে কর্তার শরনাপন্ন হয়। কর্তাকে তারা জিজ্ঞাসা করে যে কখন তিনি ছাড়বেন। কর্তা দেশবাসীকে অভয় দিয়ে বলেন-"তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া"।
⇛কর্তা সম্পূর্ণ বাস্তব কথাই বলেছেন। আসলে কর্তা তো তাদের ধরে রাখেনি বরং তারাই কর্তাকে ধরে রেখেছে। কর্তা অনেক আগেই গত হয়েছেন কিন্তু পুরাতনপন্থী মানুষেরা নতুনের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না বলেই কর্তার ভৃতকে আঁকড়ে ধরে পড়ে ছিল। কর্তার ভূতের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই- জ্ঞানবিমুখ, ধর্মভীরু মানুষের মনেই তার আধিপত্য। মনোবিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের ভয় থেকেই ভুতের জন্ম হয় এবং মানুষই তাকে পোষণ করে। কর্তার ভূত প্রসঙ্গেও একই কথা প্রযোজ্য।
উত্তরঃ - 2
⇛ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘লিপিকা’ গল্পগ্রন্থ থেকে গৃহীত ‘কর্ত্রর ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তা দেশের দুটো-একটা মানুষের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন। যারা দিনের বেলায় নায়েবের ভয়ে কথাই বলে না, তারাই গভীর রাতে কর্তার কাছে হাতজোড় করে জানতে চায়,
⇛ “কতা এখনো কি ছাড়বার সময় হয়নি।” তখন কর্তা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
⇛ গুরুত্ব : যারা ভবিষ্যৎকে মানতে ভয় পায়, তাদের মনের মধ্যেই ভূতের অস্তিত্ব। এরা একপ্রকার চোখ বন্ধ করেই সমাজে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করে। এদের মধ্যে যারা হুঁশিয়ার তারাই অশুচি। দেশের লোক এই ভেবে আনন্দে থাকে যে, মাথার উপরে কর্তা আছেন। ফলে ভূতের শাসন হয় সর্বগ্রাসী। মানুষ নিজের দোষেই এর থেকে মুক্তি চায় না। কেউ যদি অন্য ভাবনা ভাবতে যায়, তাহলে তাকে ভূতের কানমলা খেতে হয়। ফলে ভূতের শাসন চলতেই থাকে। এজন্যই কর্তা বলেন, “তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।” এভাবেই উক্তিটি হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ।
====================
৩. “ভূতের নায়েব ভুতুড়ে জেলখানার দারোগা” – ভুতুড়ে জেলখানায় কাদের সাজা দেওয়া হয়? সেই জেলখানার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ-
⇛ ভূতুড়ে জেলখানায় যারা প্রতিবাদী , প্রশ্নকারী , বিদ্রোহী তাদের সাজা দেওয়া হয়।
⇛ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের " লিপিকা " গ্রন্থের অন্তর্গত "কর্তার ভূত " গল্পে ভূত শাসন তন্ত্রে নায়েব গমোস্থারা মৃত কর্তার অশরীরী অসিস্তত্তের ভয় দেখিয়ে শোষণ পীড়নের প্রতিক্রিয়া চালিয়ে যায় । তাদের চেতনা ও বিচার বুদ্ধি নিরুপদ্রব ঘুমের শান্তিতে অসারে শায়িত থাকে । এই সুযোগে বহিরাগত বুলবুলি , বর্গী ও ভূতের পেয়াদারা এসে শোষণ পীড়ন চালায় মানুষের ওপর । এই শোষণ পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকে তাত্ত্বিকেরা অন্যায় বলে বিধান দেয় । সেই জন্যে প্রতিবাদীরা ভূতের কানমলা খায় । মানুষের অসচেতনতা , অজ্ঞতাই এই তাত্ত্বিকদের কাছে কাঙ্ক্ষিত । ভূত শাসন তন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্র শক্তি দুটি কৌশল নিরন্তর চালু রাখে -
ক) তাত্ত্বিকদের দ্বারা অজ্ঞানতার দর্শন প্রচার।
খ) ভূতুড়ে জেলখানার ভয় দেখানো।
⇛ যারা প্রতিবাদী , প্রশ্নকারী , বিদ্রোহী তাদের স্থান হয় ভূতুড়ে জেলখানায় । সেই জেলখানার দারোগা স্বয়ং নায়েব । দেওয়াল বিহীন জেলখানার ঘানিতে তাদের তেজ বা শক্তি বের করে শান্ত করে রাখা হয় । তিনি গণতন্ত্রের নামে প্রহসন চালিয়ে পীড়ন বে ব্যাবস্থাকে অদৃশ্য রাখতে সদা তৎপর থাকেন । প্রকৃত পক্ষে জেলখানা হল সংশোধনাগার । দেশের শান্তি ও নিরপত্তা রক্ষায় অপারাধিদের রাখার স্থান। কিন্তু ভূতুড়ে জেলখানা মানুষের তেজ বের করে অচলায়তনের বাঁধা গতে আবদ্ধ রাখার কৌশল মাত্র ।
এ খানে অন্ন , বস্ত্র , বাসস্থান , শিক্ষা , সাস্থ্য না থাকলেও এর ফলে দেশ জুড়ে শান্তি বজায় থাকে । এভাবেই তীব্র শ্লেষ পূর্ন ভাষায় লেখক " কর্তার ভূত " গল্পে বর্ণিত জেলখানার বর্ণনা করেছেন ।
====================
তেলেনাপোতা আবিষ্কার:
১. তেলেনাপোতায় যাওয়ার কারন কী? একে লেখক আবিষ্কার বলেছেন কেন?উত্তরঃ-
⇛ তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ হলো মৎস শিকার। তেলেনাপোতা গ্রামের নির্জন পুকুরে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মৎস্য শিকারের অসাধারণ একটি বর্ণনা আছে।
⇛ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে তেলেনাপোতা এমন একটি জায়গার নাম যে জায়গাটি জনস্রোতে ভরা রাজধানী অঞ্চল থেকে খুব একটা দূরে নয়। ঠাসাঠাসি বাসে চেপে শহরাঞ্চল থেকে মাত্র দুঘণ্টার যাত্রাপথে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল রয়েছে, যেখানে জীবন যেন থেমে গেছে বলে বোধ হয়, অবসর সময় কাটাতে এবং মৎস্য শিকারের ইচ্ছা চরিতার্থ করবার জন্যই কথক তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তেলেনাপোতায় পাড়ি দেন।
⇛ লেখক এই তেলেনাপোতায় যাওয়ার ব্যাপারটিকে আবিষ্কার বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ সভ্যজগতের এত কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে এমন একটি দমবন্ধ করা পরিবেশে স্থির জীবন প্রবাহের সন্ধান পাওয়া শহরাঞ্চলের ব্যস্ত মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানকার এক আশ্চর্য সরোবরে পৃথিবীর সবচেয়ে সরল মাছেরা প্রথম বড়শি-বিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় উদূগ্রীব হয়ে আছে। একশো দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে একটি শ্মশানের দেশ যেখানে। দশটা বাড়ি খুঁজলেও একটি পুরুষের দেখা মেলে না। এই তেলেনাপোতাতেই কবি আবিষ্কার করেছিলেন তার মাছ ধরার ব্যর্থতার জন্য ডন্য মাছরাঙার নীরব উপহাস। এই অঞ্চলটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজ্ঞাত বলে তেলেনাপোতায় যাওয়াকে লেখক আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছেন।
====================
২. “কে, নিরঞ্জন এলি?” – নিরঞ্জন কে? কোন পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন?
উত্তরঃ-
⇛ নিরঞ্জন যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের এক বােনপাে। বছর চারেক আগে সে তেলেনাপােতায় এসে যামিনীর মাকে কথা দিয়ে গিয়েছিল বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে এসে যামিনীকে বিয়ে করবে।
⇛ যামিনীর মুখের শান্ত করুণ গাম্ভীর্য গল্পকথকের মমত্ব ও সহানুভূতির উৎসমুখটি খুলে দেয় । সেই ধারাস্রোতে আবগাহন করে গল্পকথকের মনে হয়, মেয়েটি জীবনের সুদীর্ঘ নির্মম পথটি হয় পার হয়ে এসেছে। তার ক্ষীণ দীর্ঘ অপুষ্ট শরীর দেখে মনে হয় , কৈশাের অতিক্রম করে তার যৌবনে পা দেওয়ার গতি যেন স্তব্ধ।
⇛ পানরসিক বন্ধুটির কাছ থেকে যামিনী ও তার মায়ের পরিচয় জেনে যায় গল্পকথক । ম্যালেরিয়ায় নিঃস্ব ও নির্বংশ হওয়ার মতাে মুখােমুখি অবস্থায় চরম দারিদ্র্য, অসহায়তা , নিরঞ্জন নামে জনৈক যুবকের কথার খেলাপের ফলে যামিনীর বিয়ে না হওয়া প্রভৃতি নায়ককে আরও বেশি মমত্বপরায়ণ ও সংবেদনশীল করে তােলে। যে - জন্য যামিনীর মায়ের কাছে পানরসিক বন্ধুটির সঙ্গে গল্পকথক হাজির হয়। যামিনীর উপস্থিতিতে গল্পকথক যামিনীর অন্ধ ও চলচ্ছশক্তিহীন বৃদ্ধা মায়ের কাছে নিজেকে নিরঞ্জন পরিচয় দিয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিনিয়ে ফেলে। এই ভাবাবেগে ক্ষণিক হলেও তার চরিত্রের মহত্ত্ব গল্পকথককে অনেক বড়াে হৃদয়ের মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করে।
====================
৩. “আমার কথার নড়চড় হবে না” / “না মাসিমা আর পালাবো না” – বক্তা কাকে কোন কথা দিয়েছিলেন? তিনি কী নিজের কথা রাখতে পেরেছিলেন ?
উত্তরঃ-
⇛ আলোচ্য উক্তিটির বক্তা গল্পকথক। কথাটি যামিনীর মা-কে উদ্দেশ্য করা বলা হয়েছে। মধ্যবিত্ত নাগরিকের মন কথা দেয়, কিন্তু কথা রাখতে পারে না। তাদের স্বপ্ন আছে, সামথ্য নেই।
⇛ মনে হবে তারা যেন শুধু স্বপ্ন দেখতেই ভালোবাসে কিন্তু দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। গল্পের নায়ক যামিনীর সম্পর্কে অনেক কথাই বন্ধু মণির কাছ থেকে শুনে নেয়। তখনই তিনি নিরঞ্জনের তুমিকায় অবতীর্ণ হন৷
⇛ গল্প-শেষে দেখা যায়, নায়ক তার প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। যামিনীকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়। নগর কলকাতার এই নায়কের কাছে একসময় তেলেনাপোতার স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যায়। কারণ ম্যালেরিয়া তার স্মৃতিকে ঝাপসা করে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষ্ষ নিরঞ্জনেরা কখনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনা। একারণে কথকের কথার নড়চড় হয়ই।
====================
ডাকাতের মা
১. “ডাকাতের মা” গল্প অবলম্বনে ডাকাতের মায়ের চরিত্র অর্থাৎ সৌখির মায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। (ডাকাতের মায়ের মাতৃত্বের বর্ণনা দাও)উত্তরঃ-
ভূমিকাঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর রচিত ডাকাতের মা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বা মূল চরিত্র হলেন ডাকাতের মা। এই গল্পে আমরা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের কোনো নাম খুঁজে পাইনা। গল্পের প্রথম দিকে আমরা তাঁকে ডাকাতের বউ এবং দ্বিতীয় ভাগে আমরা তাঁকে ডাকাতের মা হিসেবেই চিনতে পারি।। গল্পে কোনো নাম না থাকা, এমনই এক চরিত্র রহস্যেহীন চরিত্র হলেন ডাকাতের মা। সতীনাথ ভাদুড়ী রচিত ডাকাতের মা গল্পে, ডাকাতের মায়ের চরিত্রের বেশ কিছু দিক সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। যেমন -
আত্মগর্ববোধঃ সৌখির মায়ের জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো, তাহলে হয়তো সে কখনোই একজন ডাকাতের স্ত্রী, ডাকাতের মা অথবা এক ডাকাতের পরিবারের সদস্য হয়ে কখনোই এ বিষয়ে গর্ব করতেন না যে সে একজন ডাকাতের পরিবারের সদস্য। কিন্তু সৌখীর মা এক্ষেত্রে একদমই আলাদা। একজন ডাকাতের পরিবারের সদস্য হয়ে সৌখীর মায়ের গর্ভ বোধ হয়।
পরিশ্রমীঃ সৌখীর মা যে পরিশ্রম করতে ভয় পেতেন না অথবা তিনি যে একজন অত্যন্ত পরিশ্রমি মানুষ, তা আমরা এই কথা থেকেই বুঝতে পারি, সৌখীর জেলে যাবার পর দলের লোক গত তিন বছর ধরে সৌখীর মাকে কোনো টাকা পয়সা দেয় না। এই অবস্থায় সৌখির মায়ের মায়ের আর্থিক অবস্থা একদম খারাপ হয়ে পড়লেও, তিনি নিজের আত্মমর্যাদার টিকিয়ে রাখতে, তিনি বৃদ্ধ বয়সেও খই মুড়ি বিক্রি করে নিজের সংসার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিঃ একজন ডাকাতের স্ত্রী এবং ডাকাতের মা হিসেবে সৌখির মায়ের ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি। দরজায় কতবার এবং কি রকম ভাবে টোকা পড়লে বুঝতে হবে যে- দলের লোক টাকা দিতে এসেছে নাকি সৌখী বাড়ি ফিরে এসেছে, সেগুলো সব সময়ই একজন ডাকাতের মা হিসেবে সৌখীর মাকে মনে রাখতে হতো।। এছাড়াও দরজায় টোকা করার পর কতবার নিঃশ্বাস ফেলার পর দরজা খোলা উচিত কিনা, সেটাও তার মাকে মনে রাখতে হতো। সৌখী দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে যখন ঘরে ফেরে, তখন সৌখীর মায়ের ৫ বছর পরেও সেই নিয়মকানুনগুলো মনে থাকে। এবং সেই নিয়ম গুলো অনুসরণ করেই তিনি সেদিন দরজা খুলে সৌখীর ভেতরে আসার জন্য দরজা খোলেন।
মাতৃস্নেহঃ ডাকাতের মা গল্পের আমরা সৌখির মায়ের মাতৃস্নেহ দুইভাবে দেখতে পাই।
প্রথমতঃ সৌখির মায়ের মাতৃস্নেহ থাকে তার নিজের সন্তান সৌখীর প্রতি। গল্পে আমরা সৌখীর প্রতি তার মায়ের যে ভালোবাসা বা মাতৃস্নেহ রয়েছে, সেটা আমরা বিভিন্ন ভাবে দেখতে পাই।
দ্বিতীয়তঃ একজন শাশুড়ি হিসেবেও সৌখীর মায়ের যে নিজের পুত্রবধূ এবং নিজের নাতির প্রতি অগাধ মাতৃস্নেহ এবং ভালোবাসা ছিল,তা আমরা এই কথার মাধ্যমেই বুঝতে পারি - জেলা যাওয়ার পর সৌখীর সংসারের অবস্থা যখন খুবই খারাপ হয়ে পড়ে,,তখন সখির মা নিজের পুত্রবধূ এবং নাতির ভালো-মন্দ বিচার করেই তিনি তাদের সৌখীর শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। যাতে সেখান থেকে এবং তার নাতি এবং পূত্রবধূ একটু ভাল মন্দ খেতে পেয়ে সেখানে একটু ভালো থাকতে পারে।।
উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্না একজন নারীঃ সৌখীর মায়ের ছিল ভয়ঙ্কর উপস্থিত বুদ্ধি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর, সৌখী যখন বাড়ি ফেরে, তখন সৌখীর মা বুঝতে পারেন, যদি তিনি এই সময়ে সৌখীর তার দলের লোকের সেই টাকা না দেওয়ার কথা বলে ফেলেন তাহলে,, সৌখী তার মেজাজ গরম করে তখনই হয়তো দলের লোকের সঙ্গে ঝামেলা করতে চলে যাবে। তাই তিনি অন্যান্য কথা বলে সেই ঝামেলাটা এড়ানোর করেন।।
সন্তান প্রেমঃ ডাকাতের মা গল্পের আমরা সৌখির মায়ের মধ্যে নিজের সন্তানের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং মাতৃস্নেহ দেখতে পাই। সৌখী জেলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি সৌখীর স্বৃতি নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। সৌখীর কথা ভাবতে ভাবতেই যখন সে ফিরে আসে তখন বাড়িতে আসার পরেই সৌখির মা তার সন্তানের জন্য, ব্যবসার পুঁজি হিসেবে রাখা হয়েছে খই মুড়িও সৌখীকে খেতে দিয়ে দেন। এছাড়াও সৌখীর আলু চচ্চড়ি খেতে ভালোবাসে বলে, তিনি সেই অভাবের মধ্যেই তাকে আলু চচ্চড়ি করে খাওয়ানোর কথা ভাবেন।। এবং ছেলেকে আলু চচ্চড়ি রান্না করে খাওয়াতে গিয়েই তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল গুলোর মধ্যে একটি করে বসেন।।
উপসংহারঃ এরকম ভাবেই সৌখীর মায়ের চরিত্রের আরও নানা দিক তুলে ধরে, সতীনাথ ভাদুড়ী ডাকাতের মা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র " সৌখীর মা " এর চরিত্রকে একটি আদর্শ নারী চরিত্র হিসাবে তুলে ধরেছেন।।
====================
২. “এতক্ষণে বোঝে সৌখি ব্যাপারটা” কোন ব্যাপারটা? সে কীভাবে তা বুঝতে পেরেছিল?
উত্তরঃ-1
ভূমিকাঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর রচিত ডাকাতের মা গল্পের এই উদ্ধৃতি হলো গল্পের শেষ পর্যায়ের। দীর্ঘ পাঁচ বছর জেল খাটার পর সৌখীর বাড়িতে ফিরে আসার, পরের সকালে একটি ঘটনা ঘটে। উপরিক্ত উদ্ধৃতিগুলো সেই ঘটনার কথাই ব্যক্ষা করে।
ডাকাতের মা গল্পের সৌখীর মায়ের লোটা চুরি, এবং সেই অভিযোগ নিয়ে পেশকার সাহেব এবং দারোগার জিজ্ঞাসাবাদের ফলে সৌখীর মায়ের মুখ থেকে কোনো কথা না বেরোনোর ফলে, সৌখীর মা যে পেশকার সাহেবের বাড়ি থেকে লোটা চুরি করেছিল- সৌখীর সেই ব্যাপারটা বুঝতে পারার কথাই এখানে বলা হয়েছে।।
⇛ এই ব্যাপারটা সৌখীর যেভাবে বুঝতে পেরেছিল, তা হল -
⇛ দীর্ঘ পাঁচ বছর জেলে থাকার পর সৌখী একদিন হঠাৎ করেই তার বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরে এসে ছেলে বউকে না দেখতে পেয়ে,, সৌখী সেদিন খই মুড়ি খেয়েই ঘুমিয়ে পরে। ছেলের বাড়িতে ফিরে আসায় সৌখীর মা যথেষ্ট পরিমাণে খুশি হন। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ধরে দলের লোক কোনো টাকা পয়সা না দেওয়ায়, সৌখীর মায়ের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে।। তিনি কোনো রকমে খই-মুড়ি বিক্রি কড়ে কোনো রকমে নিকের পেপ চালান। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সৌখীর বাড়িতে ফিরে আসায় তিনি একটু অস্বস্তিতে পড়েন। এ মধ্যেই তার মনে পড়ে যে, তার ছেলে সৌখী আলু চচ্চড়ি খেতে অত্যন্ত ভালোবাসে। কিন্তু তার কাছে টাকা না থাকায়, তিনি মাতাদিন পেশকারের বাড়ি থেকে একটা লোটা চুরি করে আনেন। এবং সেটি তিনি ১৪ বিক্রি করেন। এরপর সৌখির মাসে সেই চোদ্দ আনার জিনিসপত্র কিনে এনে তিনি নিজের ছেলের জন্যে আলু চচ্চড়ি রাধতে থাকেন। কিন্তু পরদিন সকালে পেশকার দোকানদারের কাছ থেকে এটা জানতে পেরে যায়, সৌখীর মা তার কাছে সেই লোটা বিক্রি করেছিল। তাই পেশকার সাহেব দারোগা সাহেবকে নিয়ে সৌখীর বাড়িতে এসে হাজির হয়। এর মধ্যেই সৌখী ঘুম থেকে উঠে পড়ে।
⇛ সৌখীর মাকে দেখতে পেয়ে দারোগা সাহেব এবং পেশাকার সাহেব তাকে লোটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সৌখীর মা এই ঘটনায় হতবুদ্ধি এবং অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে, তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করতেই ভুলে যান। এবং যখন তাকে সেই লোটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন সৌখীর মায়ের মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় না। তিনি শুধু একবার ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা হেঁট করে চোখ নামিয়ে নেন। এবং এসব ঘটনা দেখে সৌখী খুব সহজেই এই সমস্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে যায়।। গল্পে সৌখীর, তাঁর মায়ের লোটা চুরির সেই ব্যাপারটা বোঝার কথাই বলা করা হয়েছে।।
====================
উত্তরঃ-2
১) কোন্ ব্যাপার: আধুনিক আর্থসামাজিক বাস্তব ভারতের প্রেক্ষাপটে লেখা সতীনাথ ভাদুড়ীর “ডাকাতের মা' গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। দারোগার সামনে চুরির ঘটনা বিষয়ে একটিও বাক্য ব্যয় করার সাহস দেখায়নি। সৌখী বুঝতে পেরেছিল, তার মা যে কর্মটি করেছে, তা নিঃসন্দেহে গর্হিত কর্ম। সেই প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
২) ব্যাপারটি অনুধাবন: সাংসরিক অভাব অনটন যখন চরম পর্যায়ে উঠেছিল তখন পুত্রবধূ ও নাতিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে মুথাঘাসের মতো কোনোভাবে টিকেছিল সৌখীর মা। ছেলে বাড়ি ফেরায় আনন্দের সঙ্গে বিষাদও সৌখীর মার মন জুড়ে ছিল কী খাওয়াবে ছেলেকে?--সেই চিন্তায় অস্থির সৌখীর মা সারারাত চোখের দুটি পাতা এক করতে পারে না। ছেলের পছন্দের খাবার ছিল আলু চচ্চড়ি ৷ সেই প্রসঙ্গে সতীনাথ লেখেন “আলু, চাল, সরষের তেল সবই কিনতে হবে৷ অত পয়সা পাবে কোথায়?” এই চিন্তায় অস্থির থেকে সৌথীর মা মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে একটি লোটা চুরি করে।
ঘটনাচক্রে মাতাদীন সেই লোটা কেনার জন্যে বাসনের দোকানে গিয়ে উপস্থিত হলে গল্পের গতিপথ
পরিবর্তিত হয়। সমস্ত সন্ভমের নিষেধ অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র সন্তানের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখতে সৌখীর মা চৌর্যবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছিল।
মাতাদীন পেশকারের সঙ্গে দারোগা-পুলিশের গভীর সখ্যতার সম্পর্ক । ফলে তারা একসঙ্গে গিয়ে হাজির হয় সৌখীর বাড়িতে ৷ দারোগাসাহেবের প্রশ্নের জবাবে সৌখীর মা একটি কথাও বলতে পারে না। ধূর্ত ও মতলবী দারোগার সামনে মায়ের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি সম্পর্কে সতীনাথ লেখেন “কোনো জবাব বেরুল না বুড়ির মুখ দিয়ে ৷ শুধু একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে সে মাথা হেট করে”। সৌখী এই সত্য অনুধাবন করে যে, তার মা গত রাতে লোটা চুরি করেছে। সে ডাকাত হলেও তার মাকে নিয়ে তার একটি বিশ্বাসের জগৎ, গর্বের জায়গা ছিল-_ তা কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে খান খান হয়ে যায়।
====================
উত্তরঃ-3
⇛ সতীনাথ ভাদুড়ির “ডাকাতের মা' গল্পে সৌধী যে ব্যাপারটা বুঝে ছিল তা হল- তার মা চৌদ্দ আনা পয়সার জন্য একটা ঘটি চুরি করেছিল।
⇛ দীর্ঘদিন জেল খেটে আসার পর সৌধী তখনও বিছানায় শুয়ে ছিল। নতুন পাওয়া স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য সে ঠিক করেছিল বারোটার আগে উঠবে না। এমন সময় দারোগাসাহেব সহ কয়েকজন পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে হাজির হয়। দারোগাসাহেব সৌধীর মাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। ঘুমের ঘোরে সৌধী বুঝে উঠতে পারছিল না তাদের বাড়িতে পুলিশ আসার কারণ। সে নিজে তো গতকাল রাণ্রে সাজার মেয়াদ শেষ করে বাড়ি ফিরেছে। বিছানায় শুয়েই সৌধী ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছিল।
⇛ এদিকে সৌখির মা দারোগা পুলিশ দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। বুড়ি কল্পনাও করেনি যে তাদের বাড়িতে পুলিশ আসবে। ব্যাপারটা এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে সে অপরাধের কথা অস্বীকার করতেও ভুলে গিয়েছিল। দারোগাসাহেব তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করে যে, সে ওই ঘটি চোদ্দ আনায় বিক্রি করেছে কি না। এরপরেও বুড়ির মুখ থেকে কোন উত্তর বেরোয়নি।
কিন্তু সৌধা ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছিল যে তার মা তাকে খাওয়ানোর জন্য মাতাদিন পেশকারের ঘটি ঢুরি করেছিল।
====================
৩. “ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে সে” কে ছেলের নামে কল এনেছে? কীভাবে সে কলঙ্ক এনেছে?
উত্তরঃ-1
⇛ সতীনাধ ভাদুড়ীর লেখা 'ডাকাতের মা' গল্পে সৌধীর মা তার ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছিল।
⇛ দীর্ঘদিন জেল খাটার পর সৌখী বাড়ি ফিরে এসেছে। ছেলেকে কাছে পেয়ে বুড়ির আনন্দের সীমা থাকে না। কিন্তু এই আনন্দের সঙ্গে সমান্তরালভাবে একটা দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করছিল। জেলফেরত ছেলেকে সে সকালে কী খেতে দেবে এই চিন্তায় সৌধীর মায়ের ঘুম আসছিল না। শেষপর্যন্ত একটা উপায় সে বার করে ফেলে। জনৈক মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে একটি ঘটি চুরি করে এবং সেটি বাজারে বিক্রি করে ছেলের জন্য আলু-চচ্চড়ি ভাতের আয়োজন করেছিল। এমন সময় অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়িতে পুলিশ আসে। সৌধী এসব ঘটনার কিছুই জানতো না কারণ সে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু মাকে অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে সৌধী বলে যে সে ঘটি চুরি করেছে। বিনা অপরাধে জেলে যেতে হয় সৌধীকে। আর এভাবেই নিজের অজান্তে ছেলেকে কালিমালিপ্ত করেছিল সৌধীর মা।
⇛ আসলে সৌথী তো কোনো সাধারণ চোর নয়- সে একজন ডাকাত। জেলে গিয়ে লাইফারদের সঙ্গে তার ওঠাবসা, কদু-চোরদের সাথে বাক্যালাপ পর্যন্ত করে না। অথচ তার মা সামান্য ঘটি চুরি করেছে এবং সেই অপরাধে তাকে জেলে যেতে হচ্ছে। তাই এই ঘটনাকে 'কলঙ্ক' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
====================
উত্তরঃ-2
⇛ সৌধীর মা ছেলে সৌধীর নামে কলঙ্ক এনেছে।
⇛ সৌধী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাতে ঘরে এসেছে । তাকে রাতে সৌধীর মা সামান্য মুড়ি খই ছাড়া কিছুই খেতে দিতে পারেনি । তা নিয়ে মায়ের মনে কষ্ট। সকালে ছেলেকে কি খেতে দেবে সে-ভাবনায় মা অস্থির । সৌধীর জেল থেকে আনা নতুন কম্বলখানা গায়ে দিয়েও ঘুম আসেনি বুড়ির । আলুর চচ্চড়ি আর ভাত অন্তত এটুকু ছেলের জন্যে ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু সে-পয়সা কোথায় ? সকালে উঠেই ছেলেকে তো পয়সা চাওয়া যায় না। রাত তখন দুটো । বুড়ি,মাতাদিন পেশকারের বারান্দার দোরগোড়ায় গুছিয়ে রাখা জলভরা ঘটি চুরি করে আনে । বাসনের দোকানে ঘটি বেচে বুড়ি চাল ডাল আলু তেল কিনে আনে । সৌধী তখনও বিছানায় ঘুমোচেছ। বুড়ি উনুনে আলুর চচ্চড়ি বসিয়েছে। আলুর চচ্চড়ি ছেলের বড়ো প্রিয় । এমন সময় দারোগার সঙ্গে মাতাদিন পেশকার আর বাসনওয়ালা এসে হাজির তাদের দেখেই বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে । বুড়ি পুলিশ দেখে কখনোই ভয় পায় না। কারণ এতকাল তার স্বামী ও পুত্রের ডাকাতি করা হকের পেশা বলে সে গর্ব করে এসেছে । ছিঁচকে চোরকে সে কেন, সৌধীও অপছন্দ করে। অথচ ঘটি চুরি করে সে ছিঁচকে চোরের মতো নিকৃষ্ট কাজ করেছে। লজ্জায় দারোগার অভিযোগও সে অস্বীকার করতে ভুলে যায়। সৌথী ঘুম থেকে উঠে সমস্ত ব্যাপারটা জানার পর মায়ের চুরির নিকৃষ্ট কাজের অপরাধ নিজের কাঁধে তুলে নেয়। বুড়ির তখন মনে হয় নিরপরাধ ছেলেকে সে চুরির কলঙ্কে কলঙ্কিত করেছে। ' কলঙ্ক ' শব্দ ব্যবহারের 'এই হল কারণ ।
====================
৪. “আজ যে ব্যাপার অন্য” কোন দিনটির কথা বলা হয়েছে? আগের ব্যাপারে সঙ্গে সেই দিনটির পার্থক্য কোথায়?
উত্তরঃ-1
⇛ আজ ’ বলতে যেদিন সৌখীর মা জেল থেকে ঘরে ফেরা ছেলের জন্য আলুর চচ্চড়ি উনানে চড়িয়েছে, সেদিন ।
⇛ সেদিনের ব্যাপারটি হল আগের রাতে সৌখী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঘরে এসেছে । ঘরে খই -মুড়ি ছাড়া আর কিছু না থাকায় তাই খেতে দিয়েছে মা । সকালে ছেলেকে কি খেতে দেবে তা নিয়ে বুড়ির মস্ত ভাবনা । ভাত খেতে চাইলে কী করবে সে ? আলুর চচ্চড়ি খেতে ছেলে খুব ভালােবাসে । জেলে খেতে পায়নি হয়তাে । সকালে উঠেই ছেলের কাছে পয়সা চাইবে তা হয় না । চাল , আলু , তেল কেনবার পয়সা তার কাছে নেই । অগত্যা রাতেই বুড়ি মাতাদিন পেশকারের বাড়ি থেকে লােটা চুরি করে সকালে বাজারে বাসন দোকানে তা বিক্রি করে চাল , আলু , তেল কিনে এনে উনানে আলুর চচ্চড়ি বসায় । এদিকে দারােগা - পুলিশের সঙ্গে মাতাদিন পেশকার ও বাসনওয়ালা যার কাছে লােটা বেচেছে দেখে বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে । পুলিশ দেখে বুড়ি ভয় পাওয়ার লােক নয় । কিন্তু আজ ব্যাপারটা একেবারে অন্য । দারােগার সঙ্গে মাতাদিন পেশকার ও বাসনওয়ালাকে দেখে চুরি ধরা পড়ার আশঙ্কায় বুড়ি ভয় পেয়েছে । তার ধারণা ছিল বাসনওয়ালারা চুরির পুরােনাে জিনিসকে রংচং করে বিক্রি করে । এ যে তার ধারণার উলটো— ডাকাতি মরদের কাজ বলে তার এতদিন গর্ব ছিল , চুরি করা নিকৃষ্ট কাজ বলে মনে করত । শেষকালে সে নিজেই ছিঁচকে চোরের কাজ করেছে —তার লজ্জার অবধি নেই, এমনকি চুরির অভিযােগ অস্বীকার করতেও ভুলে গেছে ।
====================
উত্তরঃ-2
⇛ সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্পের সৌখীর মা যেদিন ভােররাতে ঘটি চুরি করেছিল, সেই দিনটার কথাই এখানে বলা হয়েছে।
⇛ জেল থেকে হঠাৎ ছাড়া পেয়ে বাড়িতে রাতে ফিরে আসে সৌখী। পরদিন সকালে ছেলেকে কী খেতে হবে—সেই চিন্তায় বিছানায় শুয়ে অস্থির হয়ে পড়ে সৌখীর কপর্দকশূন্য মা। সকালে সৌখীকে তার প্রিয় আলুচচ্চড়ি-সহ ভাত খাওয়াতে হলে আলু, চাল, তেল সবই তাকে কিনতে হবে। তাই অনন্যোপায় হয়ে সৌখীর মা মাঝরাতে প্রতিযােগী মাতাদীন পেশকারের দরজার বাইরে থেকে তার দামি ঘটিটা চুরি করে ভােরে বাসনের দোকানে সেটি চোদ্দো আনা পয়সায় বিক্রি করে দেয়। সকালে যখন সৌখী বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল এবং তার মা উনুনে আলুচ্চড়ি চাপিয়ে ছিল—তখনই সেই বাসনওয়ালা এবং পেশকারসাহেব-সহ দারােগা-পুলিশ এসে উপস্থিত হন তাদের বাড়ি। তাদের দেখে বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে। ডাকাত সর্দারের বিধবা এবং ডাকাত সর্দারের মা হিসেবে পুলিশকে তার ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এর আগে অনেকবারই পুলিশ তাদের বাড়ি হানা দিয়েছে। কিন্তু তার সদ্য হিঁচকে চুরির সাক্ষী-প্রমাণ-সহ আজ বাড়িতে পুলিশের আগমন ঘটেছে। তাই সেই দিনটিতে পুলিশ দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল বুড়ির।
====================
৩. পেশকার সাহেব কীভাবে তার হারিয়ে যাওয়া লোটার সন্ধান পেয়েছিল তা গল্প অবলম্বনে লেখো।
উত্তরঃ-
⇛ প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ির লেখা " ডাকাতের মা " গল্পের সনামধন্য ধনী আইনচঙ্গু হলেন মাতাদিন পেশকার ।
⇛ গভীর রাতে সৌখির মা পেশকারের বাড়ীর উত্তর দিকের আড়াই হাত গাঁথা পাঁচিল ডিঙিয়ে এসে বারান্দা থেকে জল ভর্তি লোটা চুরি করে তা দোকানে চৌদ্দ আনায় বিক্রি করে দেয় । সকালে " সখের লোটা " না পেয়ে পেশকার সাহেব " সারা বাড়ী মাথায় করে তোলে "। লোটা হল ঘরের লক্ষী খোকার মা নাকি কান্নার সঙ্গে একথা জানালেন পেশকার তাকে আইনের ধারার কথা শুনিয়ে সেই খবর থানায় পাঠিয়ে দেন। লোটা দৈনন্দিন জীবনে গৃহস্থালির আবশ্যক একটা জিনিস। তার ওপর পেশকার খুঁত খুঁতে হওয়ায় দিনে বারকয়েক লোটা মাজতেন। এরূপ প্রয়োজনীয় জিনিস চুরি হওয়ায় নতুন লোটা না হলে তাঁর চলে না। তাই ফিরতি পথে তিনি লোটা কিনতে বাসনের দোকানে যান।
⇛ নতুন লোটাগুলোর মুখ ফাঁদালো নয় বলে পেশকার যখন অপছন্দ করে তখন বাসনওয়ালা তাকে একটি পুরানো লোটা দেখায়। লোটা দেখেই পেশকার চিনতে পারে। দোকান দারকে চাপ দিতেই জানায় সৌখির মায়ের কাছ থেকে সে লোটা টা কিনেছে। তখন পেশকার সাক্ষী সহ সকালে সৌখির বাড়িতে যায় চোর ধরতে। এই চুরির কথা জানতে পেরে মাকে অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে ডাকাত সৌখি ছিঁচকে চোরের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে জেলে চলে যায়। এদিকে পেশকার তার সখের লোটা ও ফিরে পায়।
====================
৪. জেল থেকে কিভাবে রেমিশন পেয়ে সৌখী বাড়ি ফেরে এবং কেমন ভাবে তার মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
উত্তরঃ-
⇛ সতীনাথ ভাদুড়ির “ডাকাতের মা' গল্পে দেখা যায়, জেল থেকে সৌখীর ফিরে আসার দিন রাত্রে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল তার মা। ছেলের বাড়ির ফেরার আনন্দে তার মা অভিভূত। তাদের দুজনের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছিল তা মা-ছেলের সম্পর্কের দিক তুলে ধরে। কথোপকথন: অনেক রাতে সৌখী বাড়ি ফিরেছিল। মাকে সৌখী জানায়, হেড জমাদার সাহেবকে টাকা খাইয়ে সে ছাড়া পেয়েছে।
⇛ সৌখী দরকারের চাইতেও যেন বেশি জোরে কথা বলছিল। কেননা সে তার পত্রী ও সন্তাকে খুঁজছিল। ছেলের এই ওৎসুক্য সম্পর্কে সৌথীর মা আগে থেকে জানত। লেখক লিখেছেন- “প্রতি মুহূর্তে বুড়ি এই প্রশ্নেরই ভয় করছিল” তার ভয়ের কারণ, সৌথী জানতে চেয়েছিল--সে তার ছেলে-বউকে দেখতে পাচ্ছে না কেন? ছেলের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সৌথীর মা জানায়_“মেয়েদের কি মা-বাপকে দেখতে ইচ্ছে করে না একবারও?”
⇛ নাতি আর বউমার প্রসঙ্গ থেকে সৌখীর মা অন্য প্রসঙ্গে আসে। সৌথীকে হাত-মুখ ধুয়ে আসতে বলে। সৌখী খেয়ে এসেছে জানালে সৌখীর মা প্রত্যুত্তরে জানায়, “খই মুড়ি আছে। খেয়ে নে। তুই যে কত খেয়ে এসেছিস, সে আর আমি জানিনে”। --এখানে সৌখীর মায়ের অপত্য শ্লেহ ধরা পড়ে। নিজের কম্বলখানা মায়ের গায়ে জড়িয়ে দেয় সৌখী। যদিও নতুন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েও ছেলেকে খাওয়ানোর চিন্তায় তার ঘুম আসে না।
⇛ সে রাতে এভাবে সৌখী আর তার মায়ের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছিল তা আন্তরিক।
====================
সুয়েজ খালে হাঙ্গর শিকার
১. “হে ভারতের শ্রমজীবী” – শ্রমজীবী সম্পর্কে স্বামীজীর ধারণা ও মতামত প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখ।
উত্তরঃ-
⇛ স্বামী বিবেকানন্দের 'পরিব্রাজক' গ্রন্থের অন্তর্গত 'সুয়েজখালেঃ হাঙ্গর শিকার' প্রবন্ধে ভারতের অতীত এঁতিহ্য সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক ভারতের শ্রমজীবীদের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন।
⇛ প্রথমেই স্বামীজি বলেছেন তাদের অনলস পরিশ্রমের কথা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতা একটি সম্পদশালী সভ্যতা হিসাবে বহিবিশ্বে খ্যাত ছিল আর এই সম্পদের ভিত্তি ছিল ভারতের শ্রমজীবী মানুষ। এই সম্পদের টানে বহু বিদেশী জাতি ভারতে ছুটে এসেছে- কেউ বাণিজ্য করার জন্য আবার, কেউ বা লুণ্ঠন করার জন্য। এইজন্য স্বামীজি বলেছেন- পর্তুগিজ,
ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ প্রভৃতি জাতির এঁ'শ্বর্য হল এই সব সাধারণ মানুষের শ্রমদানের ফল।
⇛ একইসঙ্গে স্বামীজি একথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, মানব সভ্যতার মূল কান্ডারী এই শ্রমজীবীরা হলেও তারা কোনোদিন যোগ্য সন্মান পায়নি, বরং চিরকাল তারা দারিদ্র আর অবহেলার শিকার। স্বামীজী বলেছেন “দশ হাজার লোকের বাহবার সামনে কাপুরুষও অক্লেশে প্রাণ দেয়, ঘোর স্বার্থপরও নিষ্কাম হয়", কিন্তু ভারতের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ কারো বাহবার আশা না করে নিজ নিজ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সকলের অভ্যান্তে তারা যেসব ক্ষুদ্র কাজ করে যাচ্ছে তাতেই আসল বীরত্ব। তাই স্বামীজি তাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েছেন।
====================
২. জাহাজের পেছনে হাঙর ভেসে বেড়ানো / টোপ খুলে হাঙর পালানো / হাঙর শিকারের পর খাওয়া দাওয়ার দফা মাটি হয়েছিল কেন আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
⇛ রেড-সী পেরিয়ে গোলকোন্ডা জাহাজ সুয়েজ বন্দরে জিনিসপত্র নামানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছিল। জাহাজের যাত্রীরা প্রাথমিক বিরক্তি কাটিয়ে সুয়েজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং জলে হাঙরের আনাগোনা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ডেকে অবস্থানরত অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে বিবেকানন্দ সুয়েজের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছিলেন। এক ফৌজির হাঙর শিকারের উৎসাহে সকলেই রহস্যের গন্ধ পেলেন। ফৌজি হাঙর শিকারের উদ্যোগ করলেন। এক বড়ো বঁড়শিকে কাছিতে বেঁধে তার অপর প্রান্ত জাহাজের সঙ্গে বেঁধে রাখলেন। বঁড়শিতে মাংসখণ্ড গেঁথে তা টোপ হিসেবে জলে ফেললেন।
⇛ প্রথমবারে একটি হাঙর বঁড়শি থেকে খুলে গেলেও পরে একটি থ্যাবড়ামুখো হাঙর টোপ গিলল। তাকে টেনে তোলার সময় তার নাড়ি-ভুঁড়ি বেরিয়ে যাওয়ায় তা কেটে ফেলা হল। ডেকে তোলার পর তার মাথায় কড়িকাঠ দিয়ে আঘাত করে সেটিকে মেরে ফেলা হল। হাঙরটিকে এভাবে মারার ফলে যে নৃশংসতার পরিচয় পাওয়া গেল এবং যে উগ্র গন্ধ ছড়ালো তাতে বিবেকানন্দের খাবারের প্রতি চরম অভক্তি দেখা গেল। হাঙরটিকে কেটে তার ভিতর থেকে মাংস, হাড়, চামড়া, কাঠের টুকরো বের করে আনা হল। এই ঘটনাগুলি বিবেকানন্দ ডেকে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করলেন।
⇛ সমস্তদিনই হাঙর শিকারের বীভৎসতা বিবেকানন্দের চোখের সামনে ফুটে উঠতে লাগল—যা তাঁর মনে ঘৃণার উদ্রেক করল। কোনো খাবার তিনি সেদিন গ্রহণ করতে পারেননি। ঘটনার তীব্রতা তাঁর মনকে এমনই অধিকার করেছিল যে সব খাবারেই তিনি হাঙরের গন্ধ পেতে শুরু করেছিলেন।
====================
৩. প্লেগ রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনায় লেখক ও তাঁর সহযাত্রীরা কেমন সমস্যায় পড়েছিল তা প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখো।
উত্তরঃ-
⇛ স্বামী বিবেকানন্দের 'সুয়েজখালে: হাঙ্গর শিকার' শীর্ষক প্রবন্ধে প্লেগ রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনায় লেখক ও তার সহযাত্রীদের যে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
⇛ যেসময় লেখকদের জাহাজ সুয়েজখালে পৌ'ছায় তখন মিশরে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। প্লেগ একটি সংক্রামক রোগ। এই জাহাজ ইউরোপে পৌঁছবে, তাই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছিল। জাহাজের যাত্রীদের সুয়েজ বন্দরে নামতে বারণ করা হয়েছিল, তেমনি সুয়েজ বন্দরের কোন কর্মীও ছোয়াছুঁয়ির ভয়ে জাহাজে উঠতে পারছিল না। জাহাজে বেশ কিছু মালপত্র ছিল যেগুলো সুয়ে বন্দরে নামানোর ছিল। সুয়ে বন্দরের কুলি যেহেতু জাহাজে উঠতে পারবেনা তাই জাহাজের খালাসিরাই অপটু হাতে ধীরগতিতে মালপত্র নামাচ্ছিল। সারাদিন ধরে পণ্যসামগ্রী নামিয়ে রাত্রে হয়তো জাহাজটি সুয়েজ বন্দর ছেড়ে রওনা দিতে পারতো কিন্তু সেক্ষত্রেও সুয়েজের কোনো কর্মীকে জাহাজে উঠে সামনে আলোর ব্যবস্থা করে দিতে হতো। কিন্তু সেটা যেহেতু সম্ভব নয় তাই নিরুপায় হয়ে লেখকদের চব্বিশ
ঘন্টা জাহাজেই আটকে থাকতে হয়েছিল।
====================
গালিলিও
১. নিজের দূরবীন নিয়ে গ্যালিলিও কী কী আবিষ্কার করেছিলেন? এই আবিষ্কার সনাতনপন্থীদের মধ্যে কী প্রভাব ফেলেছিল? খ্রিস্টান ধর্মযাজকেরা তার বিরুদ্ধতা করেছিল কেন।উত্তরঃ-
⇛ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর 'গালিলিও' প্রবন্ধে বিশ্ববরেণ্য জ্যোতিবিজ্ঞানী গালিলিওর জীবনে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায়। হল্যান্ডের জনৈক কাচ-ব্যবসায়ী কাচের লেন্স নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে নিজের অজান্তেই যে দূরবীনের জন্ম দিয়েছিলেন গালিলিওর হাতে তা আরো উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। সেই দূরবীন নিয়ে গালিলিও মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে মনোনিবেশ করেছিলেন।
⇛ নিজের দূরবীন নিয়ে গ্যালিলিও যে সকল নতুন আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলি হল- চাঁদের পর্বতমালা, বৃহস্পতির উপগ্রহসমূহ, সূর্যাবিদ্বে কলঙ্কবিন্দু, শুক্র গ্রহের চন্দ্রের মতো ওজ্জ্বল্যের স্রাস-বৃদ্ধি, শনি গ্রহের বলয় এবং আরো অনেক জিনিস।
⇛ এইসকল বিষয় আবিষ্কারের পর গালিলিওর কাছে কোপার্নিকাসের মতবাদ অ্রান্ত বলে মনে হয়েছিল। তাঁর আবিষ্কারের কথা জনগণের মধ্যে প্রচার করলে সকলকে তিনি তার স্বপক্ষে আনতে পারবেন-এই ভেবে তিনি বই লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু এর ফল হল বিপরীত। গালিলিওর আবিষ্কার জনসমক্ষে আসার পরেই সনাতনীরা তার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেছিল।
⇛ এইসব সনাতনপন্থীদের মধ্যে ছিল ফ্রান্সের ডোমিনিকান সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা এবং তাঁর সেইসব সহকর্মী যারা তার যশোপ্রতিভায় ঈর্ষান্বিত ছিলেন। তারা গোপনে অভিযোগ করেছিলেন যে গ্যালিলিও ধর্মাবদ্বেষী মতবাদ প্রচার করছেন।
====================
২. ভেনিস কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যালিলিওর কদর কেন বেড়ে গিয়েছিল? এর পরিণাম কী হয়েছিল?
উত্তরঃ-
⇛ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা গ্যালিলিও প্রবন্ধে উল্লেখিত ভেনিস কর্তৃপক্ষের কাছে দূরবীন আবিষ্কারের ফলেই গ্যালিলিওর কদর বেড়ে যায়।
⇛ (১৬০৯) ধিস্টাব্দে ফ্লোরেন্সের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভেনিসে চাকুরিসূত্রে থাকাকালীন গ্যালিলিও হল্যান্ডবাসী এক ব্যক্তির এক যন্ত্র আবিষ্কারের সংবাদ শুনতে পান, যে যন্ত্রের সাহায্যে দূরের বস্তু কাছে দেখা যায়। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রকৃতপক্ষে সেযুগে ভেনিস ছিল সমুদ্র বাণিজ্যে উন্নত এক সমৃদ্ধিশালী নগররাষ্ট্র সমুদ্রপথে জাহাজে করে ভেনিসবাসীরা নানা দেশ থেকে যেমন জিনিসপত্র সংগ্রহ করত, তেমনি ইউরোপের নানা দেশে তা রপ্তানিও করত।
⇛ তবে, মাঝে-মধ্যেই ভেনিসের বাণিজ্য-জাহাজগুলিকে শত্রুদের আক্রমণের কবলে পড়তে হত। সেই আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জরুরি ছিল শত্রুর আক্রমণের আগাম খবর পাওয়া। সেই উদ্দেশ্যে, আগে থেকেই লক্ষ করার জন্য বা আগাম যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ভেনিস কর্তৃপক্ষ প্রতিটি জাহাজে একটি করে দূরবিন রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তাই তাঁরা গ্যালিলিওকে দূরবিন সরবরাহের অনুরোধ জানান। দূরবিন আবিষ্কারের কারণেই। ভেনিসের কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যালিলিওর কদর বেড়ে গিয়েছিল।
⇛ এই আবিষ্কারের ফলেই ভেনিস সরকার খুশি হয়ে তার শিক্ষকতার মেয়াদ ৬ বছর বাড়িয়ে দেন ।
====================
৪. তার জীবনের শেষ নয়টি বছরের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ-
⇛ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর 'গালিলিও' প্রবন্ধে দেখা যায় যে, দূরবিন যন্ত্র তৈরি করে গ্যালিলিও তাতে চোখ রেখে আবিষ্কার করেন চাঁদের পাহাড়, ছায়াপথের প্রকৃতি, বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ, আরো অনেক কিছু। ভেনিসের ক্যাথোলিক যাজকরা এসব যেমন বিশ্বাস করলেন না, তেমনই গালিলিওর দূরবিনে চোখ রাখতেও সন্মত হলেন না তারা। তাদের মতে খালি চোখে দেখতে না পাওয়া কিছু যদি যন্ত্রে দেখা যায়, তবে তা বাস্তব নয়, তা যন্ত্রেরই কারসাজি। তারা ভাবলেন যে, এইভাবে গ্যালিলিও আসলে কোপারনিকাসের ধর্মাবরোধী মতবাদকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তাই পরবর্তীকালে ফ্লোরেস্সে তিনি যখন কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদের সপক্ষে বই লেখেন, তখন সেখানকার ধর্মযাজক রা প্রচার করলেন যে, গ্যালিলিওর অধ্যাপনা এবং গ্রন্থ ধর্মবিশ্বাস এবং বাইবেলের বিরোধী। এভাবেই গ্যালিলিওর সঙ্গে ক্যাথোলিক যাজকদের বিরোধ বাধে।
⇛ ক্যাথলিক থিস্টান ধর্মঘযাজকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গ্যালিলিওর শেষের ন'বছর অত্যন্ত দুঃখকষ্টে কাটে। এই ন'বছর তিনি ফ্লোরেন্সের শহরতলিতে নিজের ঘরে গৃহবন্দি থাকেন। যে মেয়েটি তাঁর দেখাশোনা করতো, সেও মারা যায়। একসময় সে নিজেও প্রায় অন্ধ হয়ে যায়। তখনও তাঁর মাধার মধ্যে নতুন নতুন অনেক চিন্তার ভিড় জমা হয় কিন্তু জীবন তাঁর কাছে এতটাই তিক্তময় হয়ে উঠেছিল যে নতুন করে কিছু ভাবতে ইচ্ছে হত না।
⇛ শেষের পাট বছর পোপের অনুগ্রহে তাঁর বান্ধব একটু শিথিল হয়েছিল । সে সময় নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই তাঁর সাথে দেখা করতে আসত । অবশেষে, ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি গ্যালিলিও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
====================
৫. “এই স্বভাব শেষ জীবনে তার অশেষ দুঃখের কারণ হলো” – কোন স্বভাব? কেমন ভাবে তা দুঃখের কারণ হয়েছিল?
উত্তরঃ-
⇛ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর 'গালিলিও' প্রবন্ধ থেকে জানা যায় যে বাল্যকাল থেকেই গালিলিও সবকিছু যুক্তি সহকারে বিচার করে নিতেন। তখনকার দিনে প্রচলিত বিশ্বাস, ধ্যানধারণা কোনোকিছুই তিনি চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে পারতেন না। তাঁর এই যুক্তিবাদী স্বভাবই তাঁর শেষ জীবনে 'অশেষ দুঃখের কারণ' হয়েছিল।
⇛ গালিলিও যখন জন্মেছিলেন তখন ইউরোপে আশ্ষরিক অর্থেই মধ্যযুগ; তখনও বিজ্ঞানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুরাতন ধর্মতন্ত্র; কোপার্নিকাসের মতবাদ তখনো স্বীকৃতি পায়নি বরং টলেমি নির্দেশিত পথেই চলত গ্রহ-নক্ষত্রের পর্যবেক্ষণ। গালিলিও নিজের তৈরি দূরবীন নিয়ে যেসকল জিনিস আবিষ্কার করলেন তার ফলে কোপার্নিকাসের বিশ্ববিন্যাসের তত্ত্ব তাঁর কাছে অন্রান্ত মনে হল।
⇛ তবে নিজে জানলেই তো হবে না, সকলকেই জানাতে হবে সেসব কথা।তিনি তাঁর আবিষ্কারের কথা জনগনের মধ্যে প্রচার করার উদ্যেশ্যে বই লিখতে শুরু করলেন। আর এতেই তিনি প্রাচীনপন্থীদের বিরাগভাজন হয়ে গেলেন।
⇛ সনাতনপন্থীরা তাঁর বিজ্ঞানসাধনাকে 'ধর্মবিদ্বেষী' আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এমনি ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করেছিল যে জীবনের শেষ বছরগুলি তাঁর কাছে নারকীয় হয়ে উঠেছিল। গালিলিও যদি সেদিন যুক্তি-তর্কের পরোয়া না করে মধ্যযুগীয় বিশ্বাসের কাছে মাথা নত করে নিতেন তাহলে হয়তো তাঁর শেষ জীবনে এতো বিপর্যয় নেমে আসতো না।
====================
নীলধ্বজের প্রতি জনা
১. “নীলধ্বজের প্রতি জনা” কবিতায় জনা অর্জুনের কাপুরুষতার কোন কোন দৃষ্টান্ত স্বামীর কাছে পত্র মারফত তুলে ধরেছিলেন?
উত্তরঃ-
⇛ মাইকেল মধুসূদন দত্তের “নীলধ্বজের প্রতি জনা" কবিতায় জনা কয়েকটি দৃষ্টান্ত সহযোগে অর্জুনকে কাপুরুষ প্রমাণ করতে চেয়েছেন। সেগুলি হল-
⇛ প্রথমত, দ্রৌপদীর স্বয়স্বরসভায় অর্জুন গিয়েছিল ব্রাহ্মণের ছদ্দবেশে এবং সেই জন্য কোন ক্ষত্রিয় বীর অর্জুনকে পরাত্ত করতে এগিয়ে আসেনি।
⇛ দ্বিতীয়ত, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্মকে বধ করার সময়ও অর্জুন ছলনার আশ্রয় নিয়েছিল। সকলেই জানত যে, পিতামহ ভীন্ম কোন স্ত্রী বা ক্লীবের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবেন না এবং সেই সুযোগে অর্জুন শিখণ্ডীকে সামনে রেখে পিতামহ ভীষ্মকে বধ করেছিল।
⇛ তৃতীয়ত, কৌরব পক্ষের শক্তিমান সেনাপতি গুরু দ্রোণাচার্যকে হত্যা করার সময়ও অর্জুন ছলনার আশ্রয় নিয়েছিল। তার প্রিয় পু অশ্ব-থামা যুদ্ধে নিহত হয়েছে- এই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছিল এবং পুত্রশোকে যখন গুরু দ্রোণাচার্য অস্ত্র ত্যাগ করেছিলেন তখন অর্জুন তাকে হত্যা করেছিল।
⇛ চতুর্থত, মহারধী কর্ণকে হত্যা করার সময়ও অর্জুন মহারধী প্রথা লঙ্ঘন করেছিল। কর্ণের রথের চাকা যখন পৃথিবী গ্রাস করেছিল তখন একতরফা অস্ত্র চালনা করে অর্জুন অসহায় কর্ণকে হত্যা করেছিল।
উপরোক্ত দৃষ্টান্তগুলি ছাড়াও অর্জন যেভাবে জানার পুত্র প্রবীরকে হত্যা করেছিল তাও অর্জুনের কাপুরুষতার পরিচায়ক।
====================
২. “নীলধ্বজের প্রতি জনা” কবিতায় জনার ক্রুদ্ধ অভিমানী স্বর কিভাবে ধ্বনিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
⇛ মাইকেল মধুসূদন দত্তের “নীলধ্বজের প্রতি জনা” কবিতায় বীরাঙ্গনা জনা একজন সদ্য সন্তানহারা জননী। কিন্তু আলোচ্য কবিতায় জনার শোকালাপের থেকে কৃরুদ্ধ অভিমানী স্বর বেশি ফুটে উঠেছে।
⇛ জনার পুত্র প্রবীর যুদ্ধে নিহত হয়েছে- সে বীরোচিত কাজই করেছে। কিন্তু তার স্বামী নীলধ্বজ তার পুত্রের হত্যাকারী অর্জুনকে সিংহাসনে বসিয়ে রাজসভায় সংগীতের আয়োজন করেছেন। স্বামীর এরূপ আচরণে জনা বিশ্মিত এবং কৃরুদ্ধ হয়েছেন।
⇛ নালধ্বজের চোখে অর্জুন নরনারায়ণ হলেও জনার চোখে সে একজন কাপুরুষ। মহাভারতে বীর বলে খ্যাত হলেও অর্জুন ছলনার আশ্রয় নিয়ে দ্রোণাচার্য, ভীষ্ম, কর্ণ প্রমুখদের হত্যা করেছিল। শুধু তাই নয়, অর্জুনের কোন রাজোচিত বংশমর্যাদাও ছিল না। কিন্তু রাজা নালধ্বজের হয়তো জ্ঞান লোপ পেয়েছে তাই পুত্র হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি অর্জুনের তোষামোদ করছেন। এ অন্যায় জনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি।
⇛ জনা ক্রোধিতা হলেও প্রতিবাদ করার কোনো উপায় তার ছিলনা কারণ সে অল্তঃপুরবাসিনী রাজবধূৃ। তাই অভিমানী জনা স্বামীর কাছে চিরবিদায় নিয়ে আত্মবিসর্জনের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
====================
৩. “কিন্তু বৃথা এ গঞ্জনা” -বক্তা কে? তিনি কাকে গঞ্জনা করতে চেয়েছেন? কেন তার মনে হয়েছে এই গঞ্জনা বৃথা ?
উত্তরঃ-
⇛ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা 'নীলধ্বজের প্রতি জনা' কবিতায় মাহেশ্বরী পুরীর রানী জনা এ কথাগুলি বলেছেন।
⇛ আলোচ্য অংশে জনা তার স্বামী নীলধ্বজকে গঞ্জনা দিতে চেয়েছেন। জনার মনে হয়েছে তার স্বামীকে গঞ্জনা দেওয়া বৃথা, কারণ-
১) রাজা নীলধ্বজ হল জনার স্বামী এবং হিন্দু শাস্ত্র মতে স্বামীকে গঞ্জনা দেওয়া পাপ। তাই জনা বলেছেন "পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তোমারে"
২) জনা একজন কুলনারী, তাই বিধির বিধানে সে পরাধীন। জনার নিজের শক্তি নেই যে তার মনের বাসনা পূরণ করবে, অর্থাৎ তার পুত্রের হত্যাকারী অর্জুনের বিনাশ করবে। তার স্বামী রাজা নীলধ্বজের উচিত ছিল অর্জুনকে হত্যা করে জনার মনের বাসনা পুরণ করার কিন্তু ভাগ্যদোষে জনার স্বামী GA প্রতি বিরূপ। এইসব ভেবে ভজনার মনে হয়েছে তার গঞ্জনা দেওয়া বৃধা।
⇛ আরো একটি কারণে জনার মনে হয়েছে তার স্বামীকে গঞ্জনা দেওয়া ব্থা। সেটিহল- তার একমান্র পুল্র প্রবীর তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সেইজন্য “এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি/ বিজন জনার পক্ষে।" যে গেছে, কোনোভাবেই সে আর ফিরে আসবেনা। তাই এই অবস্থায় কাউকে গঞ্জনা দেওয়াই বৃথা।
====================
বাড়ির কাছে আরশিনগর
১. “তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে” -কাদের মধ্যে এই ব্যবধান?একত্রে থেকেও এই ব্যবধানের তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ-
⇛ উনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাউল সাধক লালন ফকিরের বাড়ির কাছে আরশীনগর' কবিতায় কবি তাঁর পড়শী বা 'মনের মানুষের' দেখা পাননি। একত্র থেকেও কবি ও তাঁর পড়শীর মধ্যে লক্ষ যোজন ফাঁক রয়ে গেছে।
⇛ কবিতাটিতে রূপকের আশ্রয়ে বাউল সাধনার ঈশ্বরতন্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছে। বাউলদের বিশ্বাস অনুযায়ী ঈশ্বর থাকেন মানুষের মনের মধ্যে। এই কবিতায় বাড়ি বলতে শরীর এবং আরশীনগর বলতে “শুদ্ধতম মনকে" বোঝানো হয়েছে। আরশীনগরের নিবাসী পড়শী হলেন কবির আরাধ্য ঈশ্বর। বাড়ির কাছেই থাকেন পড়শী অথচ কবি দুঃখ করে বলেছেন- “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে"।
⇛ কীজন্য কবির সঙ্গে তাঁর পড়শীর সাক্ষাৎ হয়নি সেটাও কবি ব্যাখ্যা করেছেন। পড়শীর গ্রামের চারিদিকে রয়েছে অগাধ জলরাশি। এই জল পেরিয়ে কবি তাঁর পড়শীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন নি। আসলে এই জলরাশি হল মানুষের বিষয়বাসনা এবং অজ্ঞানতার প্রতীক। সেই জলের কোনো কিনারা নেই যেমন মানুষের বাসনার কোনো অন্ত নেই। আবার কবি আর পড়শির মাঝখানের ব্যবধান দূর করতে পারত কোনো 'তরণী'। কিন্তু মানুষকে বাসনা-সমুদ্র পার করার মতো কোনো তরণীই নেই। কবির খুব ইচ্ছা সেই পড়শির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কারণ পড়শি কবিকে একবার ছুঁলে কবির পার্থিব যন্ত্রণা দূর হয়ে যেত। আসল কথা হল, পার্ধিব সুখভোগের আশায় মানুষ এমনই নিমভিজ্ত থাকে যে কোনোদিনই ঈশ্বরের কাছে পৌছাতে পারেনা। তাই একইসঙ্গে থেকেও মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের লক্ষ্য যোজন পার্থক্য থেকে যায়।
====================
২. “আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” – বক্তা কাকে দেখতে চান? কীভাবে তার দর্শন পাওয়া সম্ভব?
উত্তরঃ-
আরশি শব্দের অর্থ আয়না। কিন্তু লালন তাঁর গানে আরশীনগর বলতে মনকে বুঝিয়েছেন। কারণ, মনের মধ্যেই চারপাশের জগৎ প্রতিফলিত হয়। সেখানে এক পড়শির অস্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছেন কবি। এই পড়শিই হল বাউল সাধনার ঈশ্বর, যাঁকে তাঁরা মনের মানুষ বলে মনে করেন। কিন্তু বাউল সাধনায় এই পড়শির সন্ধান পাওয়া বা তাঁকে লাভ করা খুব সহজ নয়। যেখানে তিন আছেন, তার চারপাশে আছে অতি গভীর জলরাশি। মানুষের জাগতিক আশা-আকাঙউক্ষা ও বিষয়বাসনা ইত্যাদিকে এই এই জলরাশির প্রতীকে কবি বোঝাতে চেয়েছেন। সেই পড়শির কাছে যাওয়ার উপযুক্ত তরণি বা উপায় নেই।
তার থেকেও বড়ো কথা, এই পড়শি বা আত্মতন্ত্র-এর কোনো স্পষ্ট চেহারা হয় না, কারণ পড়শির হাত-পা-কাঁধ-মাথা কিছুই হয় না। অর্থাৎ বাউলদের ঈশ্বর যে নিরাকার এ কথার মধ্যদিয়েই লালন তাই বোঝাতে চেয়েছেন। অতএব সেই পড়শী শুধুই উপলব্ধির জগতে অবধান করেন। তাঁকে কখনও বোঝা যায়, কখনও বোঝা যায় না। অধচ তাঁর সন্ধান পেলেই মানুষের সব জীবনযন্ত্রণার অবসান ঘটত। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যে দূরত্ব তা ঘোচার নয়, কবির কথায় সে লক্ষ যোজনের দূরত্ব।
====================
৪. বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতায় বাউল সাধনার যে গুহ্যতত্ত্ব প্রতিফলিত হয়েছে তা আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
⇛ বাড়ির কাছে আরশীনগর’ নামক কবিতা বা বাউল গানে বাউল সাধক লালন ফকির তাঁর গানের মধ্য দিয়ে উদার ধর্মীয় সাধনার গৃঢ় তত্ত্বকথা প্রকাশ করেছেন। আলােচ্য অংশটিতে লেখক পড়শী বলতে তার আত্মদর্শন বা পরমাত্মার অনুভব বা মনের মানুষ’-এর কথাই বলেছেন। 'মন' রূপ আরশিতে মানুষ নিজেকে দেখতে পায়। এর মধ্য দিয়ে মানুষ আমিত্বকে চিনতে পারে যেটা সে বাস্তবের চোখে দেখতে পায় না। মনের মানুষের বাস এই আরশিনগরে। কিন্তু খালি চোখে তাকে দেখা যায় না, কারণ তাঁর কোনাে নির্দিষ্ট আকার নেই, তিনি নিরাকার। তাঁর বাস কখনও মনের গহনে অতল শূন্যে আবার কখনও চোখের জলে।
⇛ লালন তার মনের একান্ত ইচ্ছে সত্ত্বেও কিছুতেই মনের মানুষ বা ঈশ্বরের সাক্ষাৎ পান না, কারণ এই মনের মানুষের হাত পা-মাথা ধড় কিছুই নেই। এ এক নিরাকার অনুভূতি। তার সন্ধান পেলেই মানুষের জীবন সার্থক হয় বা মানুষ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারে। আর তাহলেই তার সব পাওয়া হয়। তখন আর পার্থিব কোনাে বস্তুর চাহিদা তাকে বাঁধতে পারে না। সব কিছুকে ত্যাগ করে তার মন তখন উদার মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায় এবং তখন জীবিত অবস্থাতেও সে স্বর্গসুখ লাভ করে।
====================
দ্বীপান্তরের বন্দিনী
১. “দ্বীপান্তরের বন্দিনী” কবিতায় বিদ্রোহী কবির স্বদেশ প্রেম কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
⇛ দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ হলেন ভারত - ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী । তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক । বন্দিনী ভারত - ভারতীর মুক্তির জন্য কবি নজরুলের ব্যথিত হৃদয়ের ব্যাকুলতার অবধি নেই । কবিতার প্রতি ছত্রে তাঁর দরদি চিত্তের আকুলতা প্রকাশিত । ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী । তিনি মুক্ত হয়ে না আসায় তাঁর শূন্যবেদিতে ক্রন্দনধ্বনি উঠছে । রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রুপাের কমল বিবর্ণ । অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে তাঁর পদ্ম শতচ্ছিন্ন ।
⇛ এই অন্যায় - অত্যাচার আর অবিচারের ঘটনায় কবি -হৃদয় বেদনাহত । তিনি মায়ের মুক্তির জন্য সতত ব্যাকুল । তাঁর ব্যাকুলতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ,যখন শুনছেন দ্বীপান্তরে বাকভারতী ঘানি টানছেন । ঘানি থেকে জীবন - চুয়ানাে তেলে হােমানল জ্বলছে । সেখানে অত্যাচারিত হয়েও অত্যাচারের কথা বলার স্বাধীনতা নেই । সত্যভাষীকে অন্যায় - অত্যাচারের মার খেতে হচ্ছে ।
⇛ সত্যভাষণের স্বাধীনতাকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে । অত্যাচারী শাসক রাজ্যপাট হারানাের ভয়ে স্বাধীনতাকামী বীরসিংহকে খাঁচাবন্দি করে রেখেছে । ব্যাঘ্রবিক্রম স্বাধীনতা যােদ্ধাকে লক্ষ্য করে অগ্নি শেল হানা হয়েছে । বীণা হয়েছে গুলিবিদ্ধ । বাণীর কমল জেল খাটছে । ব্যাকুল চিত্ত কবিমনের একটু আশা যে, মায়ের মুক্তির পূর্বাভাস সূচিত হয়েছে । কারণ যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ রেখেছেন । দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে । ‘দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে /যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।
====================
২. বন্দিনীকে মুক্ত করার জন্য কবির যে আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
⇛ দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী হলেন ভারত-ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী। তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক। বন্দিনী ভারত-ভারতীর মুক্তির জন্য কবি নজরুলের ব্যথিত হৃদয়ের ব্যাকুলতার অবধি নেই। কবিতার প্রতি ছত্রে তাঁর দরদি চিত্তের আকুলতা প্রকাশিত। ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী। তিনি মুক্ত হয়ে না আসায় তাঁর শূন্য বেদিতে ক্রন্দনধ্বনি উঠছে। রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রুপাের কমল বিবর্ণ।
⇛ অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে তার পদ্ম শতচ্ছিন্ন। এই অন্যায়-অত্যাচার আর অবিচারের ঘটনায় কবি-হৃদয় বেদনাহত। তিনি মায়ের মুক্তির জন্য সতত ব্যাকুল। তাঁর ব্যাকুলতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যখন শুনছেন দ্বীপান্তরে বাকভারতী ঘানি টানছেন। ঘানি থেকে জীবন-চুয়ানাে তেলে হােমানল জ্বলছে। সেখানে অত্যাচারিত হয়েও অত্যাচারের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সত্যভাষীকে অন্যায়-অত্যাচারের মার খেতে হচ্ছে। সত্যভাষণের স্বাধীনতাকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
⇛ অত্যাচারী শাসক রাজ্যপাট হারানাের ভয়ে স্বাধীনতাকামী বীরসিংহকে খাঁচাবন্দি করে রেখেছে। ব্যাঘ্রবিক্রম স্বাধীনতা যযাদ্ধাকে লক্ষ্য করে অগ্নি-শেল হানা হয়েছে। বীণা হয়েছে গুলিবিদ্ধ। বাণীর কমল জেল খাটছে। ব্যাকুল চিত্ত কবিমনের একটু আশা যে, মায়ের মুক্তির পূর্বাভাস সূচিত হয়েছে। কারণ যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ রেখেছেন। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে/যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।
====================
৩. “দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক” – তাৎপর্য আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
⇛ ভারতে ভারতী নেই । তিনি দ্বীপান্তরের বন্দিনী । পূজারির পুজোর আয়ােজন , শঙ্খরাব , অঞ্জলি দানের প্রয়াস ব্যর্থ, পরিহাসতুল্য । পুরুষসিংহ স্বাধীনতা যােদ্ধারা কারাগারে বন্দি , যেহেতু তাঁদের নির্ভীক সংগ্রামের ভয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তি ভীত ও সন্ত্রস্ত । ব্যাঘ্রবিক্রমী দেশপ্রেমিকদের উদ্দেশে হানা হচ্ছে অগ্নি-শেল । বাকদেবীর বীণা গুলিবিদ্ধ । বাণীর কমল জেল খাটছে । এভাবে যখন নির্মম অত্যাচার ও পীড়ন - তাড়নের স্টিম রােলার চলেছে , তখন বীণাপাণির বীণার তারে ধ্বনিত হয়েছে বিধাতার দৈববাণীর মতাে এক আশার বার্তা । তা হল মায়ের পদ্মাসনে যুগান্তরের ধর্মরাজ রেখেছেন তাঁর চরণ - পদ্ম । ‘পদ্মে রেখেছে চরণ - পদ্ম/যুগান্তরের ধর্মরাজ ।
⇛ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী ’ কবিতাটি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন । আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দিদের মুক্তির জন্য ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের আগে থেকে আন্দোলন চলছিল । সেলুলার জেলে কয়েদিদের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচারের নানা ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছিল । কবি দ্বীপান্তরের বন্দিনী বাকভারতীর রূপকে বন্দি স্বাধীনতা যোদ্ধাদের অত্যাচারিত জীবনের ছবি তুলে ধরেছেন ।
====================
নুন
১. “আমরা তো সামান্য লোক” -কে কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছেন ? সামান্য লোক শব্দের তাৎপর্য লেখ।
উত্তরঃ-
⇛ কবিতার সংক্ষিপ্ত বিষয় : কবি জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতার বিষয় হল জনৈক হতদরিদ্র শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের আত্মকথা। এই শ্রেণির মানুষ অল্পে খুশি। তারা জানে দুঃখ প্রকাশ করে দুঃখের সুরাহা হয় না। সাধারণ ভাত-কাপড়ে তাদের জীবন চলে। অসুখে ধারদেনা করে তারা সামাল দেয়। অর্থাভাবে সবদিন বাজার করতে পারে না। কখনও বা বাজার করার মতাে অর্থেরসংস্থান হলে বাজার করা মাত্রা ছাড়ায়। শৌখিনতার বিলাস কখনও বা ঘাড়ে চড়ে।
⇛ সংসারের অভাব-অনটনের কথা ভুলে বেহিসেবিবশত গােলাপচারা কিনে ফেলে। মাঝে মাঝে সংসার অচল হয়ে পড়ে। তাদের বাড়ি ফিরতে দুপুররাত হয়। খেতে বসে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও জুটে না। তখনই মাথায় রাগ চড়ে। বাপব্যাটা কিংবা দু-ভাইয়ে মিলে চঁচামেচি করে পাড়া মাথায় করে। তাৎপর্য বিশ্লেষণ : তারা দীনদুঃখী সামান্য শ্রমজীবী মানুষ। তাদের চাওয়াপাওয়া সামান্য। প্রত্যাশাও যৎকিতি।
⇛ তাদের কামনা। শুকনাে ভাতে সামান্য নুনের ব্যবস্থা থােক। সারাদিনের হাড়ভাঙাপরিশ্রমের পরে বাড়ি যখন ফেরে তখন ক্ষুধায় কাতর। খেতে বসে। পাতে পরিবেশিত হয় সকালের রান্না করা ঠান্ডা ও শুকনাে ভাত। শুধুই ভাত। ব্যঞ্জনের ব্যবস্থাদি নেই। কারণ কেনাকাটার টাকাকড়ির সংস্থান নেই। একই কারণে সামান্য নুনটুকুও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।নুনবিহীন সবকিছু বিস্বাদ। ঠান্ডা শুকনাে ভাত তাে খাওয়া সম্ভবই নয়। তাই দুঃখে-বেদনায় তাদের বিনীত আবেদন তাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক। যাদের এটুকু ব্যবস্থা করার দায়দায়িত্ব, তাদের কাছে আবেদন-গরিবের সপক্ষে এটুকু অন্তত করা হােক।
====================
২. শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রণার যে ছবি এ কবিতায় ফুটে উঠেছে তা আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
⇛ যারা দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে, তারা সবাই এক, তাদের স্বতন্ত্র অস্ত্বিত্ব নেই বলেই মনে হয়। কারণ, তাদেরসংসারগুলোয় চিরকালীন অভাবের ছাপ, সংসারের মানুষগুলির বছরভর রোগভোগ করা ও তা সামলাতে নাভিশ্বাস ওঠা, ভাত-কাপড়ের অর্থাৎ ন্যূনতমভাবে বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া, বড়োসড়ো স্বপ্ন দেখতে না চাওয়া এবং ছোটোখাটো স্বপ্নপূরণ না হওয়া।
⇛ এই সামান্য মানুষগুলি ‘ঝাঁকের কই’। বেশি কিছু চাওয়া বা পাওয়া তাদের ক্ষেত্রে অন্যায় ৷ মৌল চাহিদাগুলি মিটলেই, অর্থাৎ ভাতকাপড়ের ব্যবস্থা হলেই ঢের, আর কি চাই? প্রবৃত্তির নিবৃত্তি হলে আর কিছু চাওয়ার নেই। আর ভাতকাপড়ের ব্যবস্থা না হলে দুঃখ ভোলার উপকরণ তো হাতের সামনে আছেই—গঞ্জিকাতে টান দাও।
⇛ তাই কবি তার ‘সামান্য মানুষ’ কথক অনায়াসে বলতে পারেন- “আমরা তো অল্পে খুশি ; কী হবে দুঃখ করে? আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।” এই মানুষগুলি মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রমী হতে চায়। যেদিন রোজগার বেশি হয় সেদিন কথক একটু রোমান্টিক হয়ে উঠতে চান : “বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা।” কিন্তু যে বাড়িতে মানুষ থাকার জায়গা নেই, সেখানে গোলাপচারা পোঁতা হবে কোথায়? কথক মনে মনে যেন বলে ওঠেন—
====================
“আমার এ ছোট্ট প্রেম বাসা পেল না।” তাছাড়া ফুল কি সে গাছে ফুটত?
উত্তরঃ-
⇛ ফুলের ফোটা শুরু সৌন্দর্যপ্রেমিকের দৃষ্টির সামনে! কিন্তু যে বাড়িতে ভাতে নুন জোটে না সেখানে সৌন্দর্যের দৃষ্টি? তবে না পেতে পেতে সব সহ্য হয়ে গেছে, বোহেমিয়ান হয়ে ওঠ, গঞ্জিকাতে টান দাও, তাহলে আর দুঃখই থাকবে না, অতি সহজে বলা যাবে :
⇛ “আমরা তো এতেই খুশি, বলো আর অধিক কে চায়? হেসে খেলে, কষ্ট করে, আমাদের দিন চলে যায়।” তবে সবকিছুর একটা সীমা থাকে, সহ্যেরও একটা সীমা আছে, কাজ সেরে দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না পেলে মাথায় খুন চেপে যায়, চিৎকার করেন কথক, “সারা পাড়া মাথায় করি।” কথক চিৎকার করবেন। যাদের ‘খেয়েও খাবার উপচে পড়ে'—তাদের কিছু বলার নেই। কথক চিৎকার তখনই থামাবেন যদি তাঁর এবং তাঁর মতো মানুষের ঠান্ডা শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হয়।
====================
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুথুথুরে বুড়ো
১. “বাড়ির মালিকের অবশ্য বিলাপ করার কোনই কারণ ছিল না” – মালিকের নাম কী তার বিলাপ করার কারণ ছিল না কেন?
উত্তরঃ-
⇛ গাৰ্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের 'বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো' গল্পে বাড়ি মালিকদের নাম হল পেলাইও এবং এলিসেন্দা।
⇛ পেলাইওদের বাড়িতে একজন রক্ত-মাংসের জ্যান্ত দেবদূতকে বন্দী করে রাখা হয়েছে- এই খবর প্রচার হবার মাত্রই জনে জনে এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করে। উপচে পড়া ভিড় দেখে বাড়ি-মালিকরা দর্শনী বাবদ মাথাপিছু পাঁচ সেন্ট করে আদায় করতে শুরু করে। ক্রমশ ভিড় বাড়তে থাকে এবং বাড়তে থাকে উপার্জনও। এমন সময় সেখানে হাজির হয় মাকড়শায় পরিণত হওয়া একটি মেয়ে। এবার তাকে দেখার জন্য দর্শকদের ভিড় বাড়তে থাকে এবং বুড়োর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। এই ঘটনায় বাড়ির মালিকদের দুঃখ বা বিলাপ করার কথা ছিল কিন্তু তারা তা করেনি কারণ-
⇛ এতোদিনে বুড়োর দর্শনী বাবদ তারা যা রোজগার করেছিল তাতে তাদের ঘর ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে তারা একটি বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি বানিয়েছিল, পেলাইও সাধ্যপালের কাজ ছেড়ে দিয়ে ষাধীন ব্যবসা শুরু করেছিল এবং এলিসেন্দা অভিজাত রমণীদের মতো মূল্যবান জুতো আর পোশাক কিনেছিল। অন্যভাবে বললে, বুড়োর দর্শক কমে যাওয়াতে তারা একপ্রকার ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছিল এবং যে রোজগার তারা করেছে তা খরচ করার প্রয়োজনীয় সময় এবং সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। এইজন্য লেখক বলেছেন “বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনোই কারণ ছিল না"।
====================
২. বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়োর আবির্ভাবে পেলাইওরা অখুশি হয়নি কেন?
উত্তরঃ-
⇛ ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়োর আবির্ভাবে পেলাইও ও তার স্ত্রী এলিসেন্দা প্রথমে বিস্মিত ও পরবর্তীকালে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ঝড়-জলের মধ্যে বুড়ো পেলাইওদেরউঠোনের পাঁক ভরতি ডোবার মধ্যে আটকে পড়েছিল। ডানার পালক খসা, বিচিত্র পোশাক পরিহিত বুড়োকে দেখে পেলাইওরা প্রথমে ভয় পেয়েছিল। যখন ভয়ানক কিছু ঘটল না, তখন পেলাইও ও তার স্ত্রী এলিসেন্দা আশ্বস্ত হল।
⇛ অনেকেই এই বিচিত্র বুড়োকে স্বর্গভ্রষ্ট দেবদূত বলে মনে করেছিল। ডানাওয়ালা অদ্ভুত দর্শন জীবটিকে দেখতে কাতারে কাতারে লোক পেলাইওদের বাড়িতে ভিড় করায় পেলাইওরা প্রথম প্রথম বিরক্ত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা ঠিক করেছিল, বুড়োকে দেখার জন্য প্রত্যেক দর্শনার্থীর কাছ থেকে পাঁচ সেন্ট করে নেবে। এই দর্শনীতেই ভরে উঠেছিল পেলাইওর ভাণ্ডার। কিছু কোলাহল কিছু অত্যাচার সহ্য করতে হলেও অর্থের আমদানি হওয়ায় তাদের মন ছিল খুশিতে ভরপুর। আমদানিকৃত অর্থে কিছুদিনের মধ্যেই পেলাইও দোতলা বাড়ি তৈরি করল। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেলাগল।
⇛ স্ত্রী এলিসেন্দার জন্য উঁচু হিলের জুতো এবং রং-বাহারি সিল্কের জামাকাপড় কিনল। দর্শনার্থীদের টাকায়পেলাইওদের সংসারের অভাব দূর হয়ে গেল। ডানাওয়ালা বুড়োকে দেখিয়েই তারা এই অর্থ দর্শনার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেছিল। অর্থই পারে মানুষকে সবকিছু থেকে ভুলিয়ে রাখতে। তাই একদিন যে দর্শকদের বিরক্তিকর বলে মনে হয়েছিল পরবর্তীতে অর্থের জন্যই সে বিরক্তি তারা অনায়াসে সহ্য করে নিয়েছিল।
====================
৩. পাদ্রে গোনসাগা কে? তিনি কেন এসেছিলেন? বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জড়ো হওয়া দর্শকেরা কী ভেবেছিল?
উত্তরঃ-
⇛ গাৰ্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের 'বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো' গল্পে পাদ গোনসাগা হলেন একডজন ধর্মঘাজক।
⇛ পেলাইওদের বাড়িতে একজন রক্ত-মাংসের দেবদূতকে বন্দী করে রাখা হয়েছে- এই অদ্ভুত খবরে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে ধর্মজ্ঞানী পাদ্রে গোনসাগা হস্তদ্ত হয়ে সেখানে এসেছিলেন।
⇛ বন্দী হওয়া ডানাওয়ালা বুড়ো সম্পর্কে সমবেত জনতা যেসব কল্পনা করে ছিল সেগুলি হল-
১) ভিড়ের মধ্যে সবথেকে সরল হৃদয়ের লোকটি ভেবেছিল ডানাওয়ালা বুড়োকে 'সারা জগতের পুরপিতা' নাম দেওয়া উচিত।
২) যারা একটু কঠিন হৃদয়ের লোক তারা ভেবেছিল বুড়োকে পাঁচতারা সেনাপতির পদে উন্নীত করা হলে সব যূদ্ধ-বিগ্রহই সে জিতিয়ে দেবে।
৩) দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দর্শকেরা মনে করেছিল যে, ডানাওয়ালা বুড়োকে দিয়ে পৃথিবীতে ডানাওয়ালা প্রজাতির মানুষ তৈরি করলে তারাই একসময় বিশ্বত্রম্মাণ্ডের দায়িত্ব নেবে।
⇛ কিন্তু এসব শিশুসুলভ কল্পনাকে দূরে সরিয়ে পাদ্রে গোনসাগার মনে হয়েছিল এই বুড়োটি নেহাতই একজন জোচ্চোর ফেরেব্বাজ। তার মতে, অসাবধানীদের বেকায়দায় ফেলতে অথবা বিপথে নিয়ে যেতেই বুড়োর আগমন হয়েছে।
====================
৪. “এলিসেন্দা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল” – কি দেখে কেন সে এই নিঃশ্বাস ফেলেছিল? তারপর কী ঘটেছিল?
উত্তরঃ-
⇛ গাৰ্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের “বিশাল ডানাওয়ালা এক ধুরধুরে বুড়ো' গল্পে এলিসেন্দা দেখেছিল ডানাওয়ালা বুড়োটি আকাশে উড়ছে। এলিসেন্দা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল দুটি কারণে-
⇛ প্রথমত, এতোদিন পর্যন্ত ডানাওয়ালা সেই বুড়োটি ছিল এলিসেন্দাদের জীবনে এক প্রকার উৎপাতের মতো। বুড়োর চলে যাওয়াতে তারা সেই উৎপাত থেকে মুক্তি পেল।
⇛ দ্বিতীয়ত, ডানাওয়ালা বুড়োটি নিজেও যেন এই পার্থিব জ্বালাতন থেকে মুক্তি পেল। কোনো মতিচ্ছন্ন জরাগ্রতত শকুনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ডানাঝাপটানি দিয়ে বুড়োটি উড়ে যাচ্ছিল। সে কোনোপ্রকারে নিজেকে ধরে রেখেছিল উড়ালটায়।
⇛ এলিসেন্দা বুড়োর উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি তাকিয়ে দেখতেই থাকে কারণ-
১) ডানা থাকা সত্ত্বেও এর আগে কেউ কোনোদিন বুড়োকে উড়তে দেখিনি। এইজন্য এলিসেন্দার কাছে বুড়োর উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি ছিল অবিশ্বাস্য এক সত্য।
২) দীর্ঘাদন ধরে তাদের জীবনে বুড়োটি ছিল একপ্রকার উপদ্রবের মতো, তাই এতদিনে সে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। কিন্তু এখন আর সে কোনো উপদ্রব নয়, বরং কল্পনার রাজ্য থেকে উঠে আসা জীবন্ত একজন দেবদূত।
৩) এলিসেন্দাদের ভাগ্যপরিবর্তনের মূল কারণ ছিল এই বুড়োটা। এইজন্য তার বিদায়-দৃশ্যটি এলিসেন্দার সকৃতজ্ঞ মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
====================
৫. পড়ে থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে কারা কেন চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল? পড়ে থাকা শরীরটার বিবরণ নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তরঃ-
⇛ গাৰ্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের 'বিশাল ডানাওয়ালা এক ধুরধুরে বুড়ো' গল্পে পেলাইও এবং এলিসেন্দা ডানাওয়ালা বুড়োকে দেখে এতোটাই হতচকিত হয়ে পড়েছিল যে তারা কিংকর্তব্যবিমৃঢ় হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
⇛ কোনো এক বর্ষণক্লান্ত বিষন্ন দুপুরবেলায় কাঁকড়াগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরবার সময় পেলাইও প্রথম আবিষ্কার করেছিল যে তাদের উঠোনের পেছন কোণাটায় কিছু একটা যেন ছটফট করে নড়তে নড়তে কাৎরাচ্ছে। খুব কাছে গিয়ে সে বুঝতে পেরেছিল সেটি আসলে এক ধুরধুরে বুড়ো। সে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী এলিসেন্দাকে ডেকে এনেছিল। এরপর তারা দুজন মিলে পড়ে থাকা শরীরটাকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
⇛ সেই বুড়োর পরনে ছিল ন্যাকড়া-কুড়োনির পোশাক। তার টাক-পড়া মাধাটায় কয়েকটি মাত্র বিবর্ণ চুল ছিল। বুড়ো ছিল ফোগলা। তবে তার শরীরে যে জিনিসটা সব থেকে আশ্চর্যজনক ছিল তা হল তার অতিকায় শিকারি পাখির মতো এক জোড়া ডানা। ডানাগুলির অর্ধেক পালক খসে পড়ে গিয়েছিল এবং উঠোনের কাদায় একেবারে জট পাকিয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে তাকে ঝোড়ো কাকের প্রপিতামহের মতোই লাগছিল।
====================
শিক্ষার সার্কাস
১. “শিক্ষার সার্কাস” কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।
উত্তরঃ-
⇛ মালায়ালাম ভাষার ষ্নামধন্য কবি আইয়ান্না পানিকরের একটি অনবদ্য কবিতা হলো "শিক্ষার সার্কাস'। কবিতার এই নামকরণ থেকে কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে এটাই অনুমান করা যেতে পারে যে কবি কোনোভাবে শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন। মূল কবিতাটি পাঠ করলে কবির অভিপ্রায় আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
⇛ শিক্ষা হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নবীন শিক্ষার্থী তার পূর্বসূরীদের আয়ত্ত করা জ্ঞান আহরণ করতে পারে। কিছু প্রচলিত এবং কিছু অপ্রচলিত মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শিখতে থাকে এবং সারাজীবন ধরেই সে কিছু না কিছু শেখে। কবি এখানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার অর্থাৎ বিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন এবং তাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
⇛ প্রচলিত পরীক্ষা ব্যবস্থা হল পরীক্ষারসর্বঃ। এখানে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান পরিমাপ করা হয় বৎসরান্তে একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষায় পাশ করলেই যেহেতু একজন শিক্ষার্থী পরের শ্রেণীতে উন্নীত হতে পারে, তাই পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়াটাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে, জ্ঞানার্জন হয়ে ওঠে গৌণ বিষয়। এইভাবে একের পর এক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন সব শিক্ষা শেষ হয়ে যায় তারপরও দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর লব্ধ জ্ঞান শূন্য। কবি এই শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন।
⇛ সার্কাসের একজন জোকার যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠে, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী তেমনি ক্রমশ উচ্চতর শ্রেণীতে উন্নীত হয়। আর এই প্রেক্ষিতে কবিতার নামকরণটি বিশেষ ব্যঞ্জনাবাহী হয়ে উঠেছে।
====================
২. কবিতা অবলম্বনে শিক্ষা সার্কাসের তুলনীয় কিভাবে হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
⇛ শিক্ষার সার্কাস কবিতায় প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটির বক্তা কবি আইয়াপ্পা পানিকর স্বয়ং | মানুষের জীবন সবসময়ই শ্রেণিবদ্ধ। সামাজিক ও ব্যক্তিগত চাহিদা এবং লক্ষ্যপূরণের প্রয়োজনে নিরন্তর এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার পথ খুঁজে চলে মানুষ। শিক্ষাক্ষেত্রে এর বিপুল অনুশীলন লক্ষ করা যায়। কিন্তু পরীক্ষায় সাফল্যই জীবনে প্রধানতম হয়ে ওঠায় জ্ঞানের অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষা ক্রমশই শিক্ষার্থীর মন থেকে হারিয়ে যায় | মানুষ দ্রুত যান্ত্রিক এবং আত্মসুখ-সর্বস্ব হয়ে পড়ে।
⇛ শিক্ষাহীন এই শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন কবি | সার্কাসের ট্রাপিজের খেলায় যেমন খেলোয়াড় একটা দড়ি বা বার থেকে শারীরিক কসরত দেখিয়ে আর একটিতে চলে যান, শিক্ষার ক্ষেত্রে এক শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে পরের শ্রেণিতে যাওয়া তেমনই একটা বাহ্যিক চলনমাত্র। এর সঙ্গে জ্ঞানার্জনের কোনো সম্পর্ক নেই।
⇛ সার্কাসে যেমন কখনো কখনো মুহূর্তের বিচ্যুতি মানে নিশ্চিত পতন, প্রচলিত পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাতেও তেমনই একটি পরীক্ষায় সাফল্য না পেলে জীবনই যেন নিরর্থক হয়ে যায়। পাসের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের তথ্যকে গলাধঃকরণ করার চেষ্টা চলে নিরন্তর। চেতনাবিমুখ এই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন কবি পানিকর তাই শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
====================
৪. জ্ঞানের অভাব শিক্ষার সার্কাস কবিতায় কিভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে?
উত্তরঃ-
⇛ আইয়াগ্না পানিকরের লেখা 'শিক্ষার সার্কাস' কবিতাটিতে পরীক্ষাসর্বব শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। কবির সরাসরি প্রশ্ন - “জ্ঞান কোথায় গেল?” এর উত্তরে কবি বলেছেন যে সে যেখানে গেছে সেটা ধোঁকা।
⇛ শিক্ষার দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান হলো অখণ্ড। কিন্তু কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে এই সামগ্রিক জ্ঞানকে নানাভাবে বিভাজিত করে শিক্ষাগ্রহণ করতে হয়। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এই কাজটিই করা হয়। শিশুর বয়স এবং পরিনমন অনুযায়ী প্রধাগত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। সেইজন্য শিক্ষালয়গুলিতে নির্দিষ্ট বয়সে নির্দিষ্ট শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে একটি শ্রেণি থেকে আর একটি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হলে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। পরীক্ষায় পাশ করাই যেহেতু সফলতার মাপকাঠি সেই জন্য শিক্ষার্থীরা যেটুকু পড়াশুনা করে কেবলমাত্র পাশ করার জন্য করে।
⇛ পাশ করার মাধামেই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় সার্থকতা আসে এবং কোন মানুষ জীবিকা গ্রহণের (চাকরি পাওয়ার) যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। সেই জন্য শৈশবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণী এবং এইভাবে শিক্ষার সবকটি স্তর পেরিয়ে যৌবনে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু দেখা গেছে সমস্ত শ্রেণি পাশ করেও একজন মানুষ প্রায় কিছুই শেখেনা। আসলে সে ততটুকুই শিক্ষাগ্রহণ করেছে যতটুকু তার পাশ করার জন্য প্রয়োজন। কবি বর্তমান শিক্ষাব্যাবস্থায় জ্ঞানের বড় অভাব লক্ষ্য করেছেন। তাই কবিতার শেষে তিনি বলেছেন-সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা'।
⏩
অবশ্যই মনে রাখবে এই প্রশ্নগুলি ছাড়াও কিন্তু তোমরা গল্প ও কবিতা গুলি মনোযোগ সহকারেপড়বে। গল্প তো পড়বেই কিন্তু উপরে দেয়া প্রশ্ন গুলি বেশি জোড় দিয়ে পড়বে।
ব্যাকরণ এবং সাহিত্য
তেলেনাপোতা আবিষ্কার থেকে ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (SAQ)
১. তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের কোন গল্প সংকলনের অন্তর্গত?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের “কুড়িয়ে ছড়িয়ে” গল্প সংকলনের অন্তর্গত।
২. তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কজন সঙ্গি থাকা উচিত?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য দুজন সঙ্গি থাকা উচিত।
৩. তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য গল্পে কোন মাসের উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য গল্পে ভাদ্র মাসের উল্লেখ করা হয়েছে।
৪. পাতলা কাচের মতো পাখার অধিকারী বলে কবি কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ পাতলা কাচের মতো পাখার অধিকারী বলে কবি ফড়িংকে বুঝিয়েছেন।
৫. গল্পে যামিনীর মা নিজেকে কি বলে সন্মোধন করেছেন?
উত্তরঃ গল্পে যামিনীর মা নিজেকে “ঘাটের মড়া” বলে সন্মোধন করেছেন।
৬. তেলেনাপোতা যাওয়ার শেষ বাহন কি ছিল?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা যাওয়ার শেষ বাহন ছিল গোরুর গাড়ি।
৭. তেলেনাপোতায় কতো বছর আগে ম্যালেরিয়া হয়েছিল?
উত্তরঃ এক – দেরশো বছর আগে তেলেনাপোতায় ম্যালেরিয়া হয়েছিল।
৮. পাঠ্যাংশে আপনি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ পাঠ্যাংশে আপনি বলতে পাঠককে বোঝানো
হয়েছে।
আরও পড়ুন: এক নজরে একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাজেশন ২০২৩ | Class 11 Bangla Suggestion 2023
৯. কতদিন আগে নিরঞ্জন যামিনীদের বাড়িতে এসেছিল?
উত্তরঃ চার বছর আগে নিরঞ্জন যামিনীদের বাড়িতে এসেছিল।
১০. ক্যানেস্তারা বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ ক্যানেস্তারা বলতে টিনের তৈরি বাদ্যকে বোঝানো হয়েছে, যা তারা সাধারণত বাঘ তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করতো।
১১. একটা কেমন গন্ধ অনেকক্ষণ ধরে সবাইকে অভ্যর্থনা করছে?
উত্তরঃ একটা কটু গন্ধ অনেকক্ষণ ধরে সবাইকে অভ্যর্থনা করছে।
নতুন আপডেট:- পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য দপ্তরে অষ্টম শ্রেণী পাশে চাকরি | বেতন ১২০০০ টাকা | অষ্টম শ্রেণী পাশে চাকরি
১২. তেলেনাপোতাকে শেষপর্যন্ত লেখকের কি বলে মনে হয়েছিল?
উত্তরঃ তেলেনাপোতাকে শেষপর্যন্ত লেখকের অবাস্তব কুয়াশার কল্পনামাত্র বলে মনে হয়েছিল।
১৩. ‘কিন্তু সে কথা ওকে বলে কে?’ – কোন কথা?
উত্তরঃ নিরঞ্জন ইতিমধ্যে বিয়ে করে সংসার করছে এই কথা।
১৪. “বসে আছেন কেন? টান দিন” – উক্তিটির বক্তা কে?
উত্তরঃ উক্তিটির বক্তা যামিনী।
১৫. তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে হলে কখন বেরোতে হবে?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে হলে খুব ভোরবেলাতে বেরোতে হবে।
১৬. “ঘরের অধিকার নিয়ে আপনাদের সঙ্গে সমস্ত রাত বিবাদ করবে” – এখানে লেখক কাদের সাথে বিবাদের কথা বলেছেন?
উত্তরঃ এখানে লেখক দু-তিনটি চামচিকার সাথে বিবাদের কথা বলেছেন।
১৭. “আমার কথার নড়চড় হবে না” – কে একথা বলেছিল?
উত্তরঃ “আমার কথার নড়চড় হবে না” – একথা বলেছিল কথক স্বয়ং।
১৮. “যামিনী বলবে” – যামিনী কি বলবে যখন লেখকরা চলে আসতে উদ্যত হবে?
উত্তরঃ যখন লেখকরা চলে আসতে উদ্যত হবে তখন যামিনী বলবে, আপনাদের ছিপটিপ যে পড়ে রইল।
১৯. ‘মহাকালের কাছে সাক্ষ দেওয়ার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে’ – এসব দেখে কথকের কি মনে হয়?
উত্তরঃ এসব দেখে কথকের মনে হয় বিশাল মৌন সব প্রহরী গাড়ির দুপাশ দিয়ে যেন সরে যাচ্ছে।
২০. “ঘরে ঢুকে বুঝতে পারবেন” – কি বুঝতে পারবেন?
উত্তরঃ ঘরে ঢুকে বুঝতে পারবেন ঘরটির অধিষ্ঠাত্রী আত্মা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
২১. তেলেনাপোতা যাবার সময় বড়ো রাস্তা থেকে নেমে কোথায় দাঁড়াতেই হবে?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা যাবার সময় বড়ো রাস্তা থেকে নেমে কোনো এক জলার কাছে দাঁড়াতে হবে।
২২. তেলেনাপোতা যাবার আসল উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা যাবার আসল উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা।
২২. তেলেনাপোতা যাবার আসল উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা যাবার আসল উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা।
২৩. নিরঞ্জন কে ছিল?
উত্তরঃ যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের এক বোনপো ছিল নিরঞ্জন।
২৪.“ আমি জানতুম তুই না এসে পারবি না” – কে কাকে বলেছে?
উত্তরঃ যামিনীর মা গল্প কথককে নিরঞ্জন মনে এই
কথাগুলো বলেছে।
২৫. “প্রতীক্ষাও আপনাদের ব্যর্থ হবে না” – কাদের, কোন প্রতীক্ষা ব্যর্থ হবে না?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার নামক গল্পে লেখক ও তার বন্ধুদের প্রতীক্ষা ব্যর্থ হবে না।
• কারন একটু পরেই তারা আবছা অন্ধকারে ধীর গতিতে একটি ক্ষীণ আলো প্রজ্বলিত সহ গরুর গাড়িকে এগিয়ে আসতে দেখবে।
নতুন আপডেট:- কোন কোন রোগের জন্যে কোন কোন টেস্ট | গুরুত্বপূর্ণ জিকে প্রশ্ন (Science GK)
২৬. গোরুর গাড়িটি দেখে কথকের কি মনে হয়েছিল?
উত্তরঃ গোরু এবং গোরুর গাড়িটিকে দেখে গল্পকথক এবং তার সঙ্গীদের মনে হয়েছিল পাতালের কোনো বামনের দেশ থেকে গাড়িটি এসেছিল।
২৭. মশারা কীভাবে নবাগতদের অভিনন্দন জানাবে বলে কথক মনে করেন?
উত্তরঃ ভাঙা লন্ঠনের চিমনির আলো ক্রমে ক্রমে নিভে আসলে মশার দল ভিড় করে আসে এবং অতিথিদের অভিনন্দন জানানোর জন্য ক্রমাগত হুল ফুটিয়ে চলে।
২৮. তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গল্পকথকের বাস করা ঘরটির রুষ্ট আত্মার অভিশাপ কীভাবে বর্ষিত হয়েছিল বসবাসকারীদের ওপর?
উত্তরঃ একটু হাঁটাচলা করলেই ঘরের ছাদের দেওয়াল থেকে ভাঙা প্লাস্টার গল্পকথকের গায়ের ওপর বর্ষিত হচ্ছিল।
২৯. “তারপর হঠাৎ জলের শব্দে আপনার চমক ভাঙবে” – চমক ভেঙে কি দেখবেন?
উত্তরঃ চমক ভেঙে গল্পকথক দেখবেন স্থির জল কেঁপে উঠেছে এবং বড়শির ফাতনা তার ফলে ধীরে ধীরে দুলছে।
৩০. ‘তবু মুখে ওর না নেই’ – কার কথা বলা হয়েছে? কোন প্রসঙ্গে কে বলেছে?
উত্তরঃ আলোচ্য অংশে যামিনীর কথা বলা হয়েছে।
• যামিনীর বৃদ্ধা অসুস্থ মা মনে করেন যে তিনি নানাভাবে যামিনীকে যন্ত্রণা দিয়ে থাকেন, কিন্তু যামিনী কখনোই তার মাকে তিরস্কার করে না। সেই প্রসঙ্গেই যামিনীর মা এই কথা বলেছেন।
৩১. “থাক না” – কে কোন প্রসঙ্গে বলেছে এই কথা?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে কথক ও তার সাথীরা ফিরে আসার মুহূর্তে গোরুর গারিতে ওঠার সময়ে যামিনী গল্পকথককে লক্ষ করে তার ছিপগুলি পড়ে থাকার কথা বলে। যামিনীকে হয়তো কিছুটা আশ্বস্ত করেই গল্পকথক থাক না শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন।
৩২. মহানগরে ফিরে আসার পর তেলেনাপোতা সম্পর্কে লেখকের কি মনে হতে থাকে?
উত্তরঃ মহানগরে ফিরে আসার পর লেখকের মনে
তেলেনাপোতার স্মৃতি সুদূর অথচ অতি অন্তরঙ্গ একটি তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে আছে।
৩৩. “কিন্তু সে কথা ওকে বলবে কে?” – কোন কথা কাকে বলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ নিরঞ্জন যামিনীকে বিয়ে করবে না বলেই বিদেশ যাবার মিথ্যা কথা যামিনীর মাকে শুনিয়েছিল। নিরঞ্জন যে বহু আগেই বিয়ে করে সংসার পেতেছে সেই কথাটি যামিনীর মাকে যে বলা যায়নি, সেই কথাই বলা হয়েছে।
৩৪. “বসে আছেন কেন? টান দিন।” – কে কাকে কিসে টান দেওয়ার কথা বলেছে?
উত্তরঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার নামক গল্পে কথক ও তার দুই বন্ধু তেলেনাপোতায় গিয়েছিল মাছ ধরার অভিপ্রায়ে সেখানে কোনো এক পুকুরে কথককে দির্ঘক্ষন ছিপ হাতে বসে থাকতে দেখে যামিনী কথককে ছিপে টান দেওয়ার কথা বলেছে।
৩৫. “এই অজগর পুরীর ভেতরে বসে সেই আশায় দিন গুনছে” – কে কীসের আশায় দিন গুনছে?
উত্তরঃ যামিনীর মা আশায় দিন গুনছে।
• যামিনীর মা যামিনীর বাল্য বয়সে তার দূর সম্পর্কের কোনো এক বোনপোর সাথে যামিনীর বিবাহ স্থির করেন। সেই ছেলেটি বিদেশ থেকে চাকরি করে ফিরে আসার পরে যামিনীকে বিয়ে করবে। সেই আশাতেই বৃদ্ধা দিন গুনছে।
No comments:
Post a Comment
Thanks for comment us.